ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ লস এ্যাঞ্জেলেস ,১৯৯১। আধুনিক বিশ্বের অন্যতম রূপকার ম্যাক্সিমিলিয়াম ওফালস তারঅবৈধ কন্যাসন্তান ইন্ডিয়ার দোরগোড়ার ভরদুপুরে ছুকিকাঘাতে নিহত হলো। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করল তারই কাশ্মীরী ড্রাইভার, এক রহস্যময় মানুষ- নিজেকে যে শালিমার দ্য ক্লাউন (সঙ শালিমার) বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। নিহত ব্যক্তিটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিরোদ সংগ্রামের (রেজিস্ট্যান্স) একজন বীর। তার ছিল দুর্দান্ত বুদ্ধি বৃত্তিক সামর্থ্য। অত্যন্ত যৌনাবেদনময় সুপুরুষ ছিল সে । ভারেত নিযুক্ত একজন সাবেক মাকিংন রাষ্ট্রদূত এই ম্যাক্সিমিলিয়ান ওফালস পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী বিভিাগের প্রধান হয়েছিল। প্রথমে এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল এটা এক আবেগতাড়িত ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ড। এটি ম্যাক্স. তার হত্যাকারী ও তার মেয়ে এবং চতুর্থ এক নারী চরিত্রের কাহিনী। এই চতুর্থ নারী চরিত্রটি অন্য সবার সঙ্গে যোগসূত্র রচনাকারী-যার কাহিনী অন্য সবাইকে প্রতিভাত করে। এক গভীর ভালবাসার মারাত্নক পরিণতির কাহিনী এটি, হারাবার বেদনা যেখানে ধ্বংস ডেকে আনে। এক বিশাল ব্যাপ্তি এই কাহিনী ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড আর তার ওপর কাশ্মীর তো রয়েছেই । এর কেন্দ্রের রয়েছে সেই ভূস্বর্গের কাহিণী-যা গৌরবদ্বীপ্ত ফলের বাগান। ফুলে ফুলে গুঞ্জন তোলা মৌমাছি, বনানীর ছায়ানিবিড় পর্বতমালা,নিপাট কাকচক্ষু হরের হৃদে এক অনাবিল সৌন্দর্যের আকর। সেখানে রয়েছে সবুজ চোখের এক ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্বর্গ্ অবশ্য যেভাবে তাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেভাবে ধ্বংস হয়নি তা। এখানে কেবলই শেকড় উপড়ে যায় জীবনের, পরিবর্তিত হতে থাকে নাম। কিছুই চিরস্থায়ী নয়, তবুও সবকিছু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ঘটনার বিস্তার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ে এবং ইতিহাসের মুক্তো কুড়িয়ে সালমান রুশদী এমনই এক জাঁকালো কাহিনীর রচনা করেছেন, যা দখল করে নেয় পাঠক-হৃদয় এবং সমস্যাসঙ্কুল সময়ের আত্না।
ভারতীয় বংশােদ্ভূত বৃটিশ উপন্যাসিক গদ্যকার সালমান রুশদি পৃথিবীব্যাপী আলােচিত সমালােচিত হয়েছেন বহুবার। ১৯৭৫ সালে প্রথম উপন্যাস লেখায় হাতেখড়ি। তারপর পেছনে তাকাতে হয়নি। তাঁর লেখায় একধরনের বিষয়ের বিষয়িক প্রতীয়মান বিশ্লেষণ চোখে পড়ে। তার গদ্যের আধুনিকতার সে-এ আমরা সহজেই খুঁজে পাই বাস্তব পট-পরিবর্তন। রহস্যময়ী পালাবদলের রুশদি একেবারেই অনবদ্য... মনবিশ্লেষণে নির্মম অনুভূতির ভেতর পাঠকদের ঘােরপাকে ফেলে দেন অজান্তে। তার খন্ড খন্ড শব্দের ব্যবহার সয়ে যাওয়া ভাবনার প্রান্তে রুশদি এগিয়ে এসেছেন স্মৃতির ক্যানভাসে। মানবজীবনের ইতিহাসে চাবুকের মত শব্দ ভাষণে দুর্দান্ত খেলােয়াড়। তার গদ্যের বিষয় আসয় গড়ে উঠেছে মানুষের বাস্তবতার মূল শিকড়ে। তিনি দেখাতে চেয়েছেন প্রতিদিনের সমাজ সভ্যতায় এক নিরাবরণ জাদুর দরজা। ভাবনাহীন প্রতিশ্রুতি নিয়েই রুশদি হেঁটে চলেছেন নিরবধি স্বপ্নের মাঝে। দাঁড়াতে চেয়েছেন ধ্রুপদী রাগিনীর বাস্তবতায়। ফেলে আসা দিন বদলের হিংস্রতায় আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন সত্য অসত্যের না বলা অনেক কথা। শব্দের সুরে বাঁধতে চেয়েছেন প্রতীক নির্ভরতার সড়ক। তার গদ্যের অনুপম ভাষা আর টুকরাে খন্ড অংশের ধারাবাহিকতায় পৌছে দিতে পেরেছেন সচেতন পাঠকদের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে সালমান রুশদি সহজ সরল ব্যঙ্গাত্বক নিষ্ঠুর গদ্যের জনক।। ভারতীয় বংশভূত বলে তাঁর লেখায় ভারতীয় সমাজ-রাজনীতি ইতিহাস ওঠে আসে। সালমান রুশদি মানে অদ্ভুদ-সত্য দেশ প্রেমে সঠিক সত্যবান পুরােহিত।