সারাংশ একজন নূর হোসেন। উদোম গা, জামাটা কোমরে বাঁধা। উত্তোলিত মুষ্টিবদ্ধ হাত, বুকে-পিঠে লেখা স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। গণতন্ত্রের মুক্তির মিছিলে শামিল হয়ে ঢাকার রাজপথে শহীদ হলেন তিনি। হয়ে উঠলেন গণতন্ত্রের লড়াইয়ের মহান প্রতীক। তাকে নিয়ে শামসুর রহমান লিখলেন অমর কবিতা ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’।
কিন্তু কে এই নূর হোসেন? তৎকালীন সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক মতিউর রহমান দেখা পান নূর হোসেনের বাবা ট্যাক্সিচালক মজিবুর রহমানের। জানলেন নূর হোসেন এবং তাঁদের পরিবারের কথা, তাঁদের জীবন সংগ্রাম ও দেশ নিয়ে প্রত্যাশার কথা। এই ইতিবৃত্ত এবং নূর হোসেনকে নিয়ে কবি শামসুর রহমানের তিনটি কবিতার সম্মিলন এ বই।
শামসুর রাহমান
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানা থেকে আরেকটু ভেতরে মেঘনাপাড়ের গ্রাম পাড়াতলী। কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক নিবাস। তবে জন্মেছিলেন ঢাকা শহরের ৪৬ নম্বর মাহুতটুলির বাড়িতে। তারিখ ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর। দশ ভাইবােনের মধ্যে জেষ্ঠ্য তিনি।
১৯৪৮ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর তখন মননের গহীন তল্লাটে কবিতার যে আবাদভূমি গড়ে উঠেছিল, তা কেবল উর্বরই হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে নলিনীকিশাের গুহের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা। তারপর দে ছুট আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়েছেন আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), সাংবাদিকতার জন্যে পেয়েছেন জাপানের মিৎসুবিশি পদক (১৯৯২), ভারতের আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪) ছাড়াও বহু পুরস্কার। তিনি ভারতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ‘মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালে যে চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন, একই পেশায় থেকে ১৯৮৭ সালে দৈনিক বাংলার সম্পাদক পদ থেকে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। জীবনে উত্থান-পতন, দারিদ্র্য, হতাশার ঘুর্ণিপাকে দুলেছেন, তবু খেই হারাননি জীবন, সাহিত্য ও কবিতার পাঠ থেকে।
মূলত কবি হলেও সাহিত্যে তাঁর কাজ বহুমাত্রিক। অনুবাদ সাহিত্য থেকে গদ্যের বিভিন্ন প্রশাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে তিনি। মৃত্যুবরণ করেন।