ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ১৯৪৭-এর ভারতভাগের মধ্য দিয়ে যে ‘স্বাধীনতা’ এসেছিল সেই মেকি স্বাধীনতার স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে উঠল বাংলা ভাসার উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ক্রমে বোঝা গেল বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করে তাদের গোষ্ঠীপরিচয় ভুলিয়ে , শুধু মুসলমান পরিচয়ে তাদের পাকিস্তানি করে তুলবার নীল নকশা তৈরি করে অগ্রসর হচ্ছে তখনকার শাসকগোষ্ঠী।
এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙালি সংষ্কৃতির অক্ষুণ্ন রাখার প্রস্তৃতি শুরু হল। শত বাধার মুখে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদ্যাপন, ছায়ানট প্রতিষ্ঠা, বটমূলের বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলবার সাধানায় ব্রতী হলেন কিছু সংস্কৃতিকর্মী। সন্জীদা খাতুন এঁদেরই অন্যতম।
ভাষা-আন্দোলন,নববর্ষ, ছায়ানট আর মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁর লেখার সংকলন ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’য় রয়েছে এই সাধানারই ইতিহাস।
সন্জীদা খাতুন
সনজীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩-এর ৪ এপ্রিল। তার মা সাজেদা খাতুন। বাবা জাতীয় অধ্যাপক কাজী মােতাহার হােসেন। বাঙালি সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশে আত্মনিবেদিত সন্জীদা খাতুন আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে এক অনন্য মানুষ। ভাষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক স্বাধিকার আন্দোলন, শত বাধার মুখে রবীন্দ্র-শতবর্ষ উদযাপন, বটমূলে বর্ষবরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনকে ঋদ্ধ করে বাঙালিত্বের দৃঢ় ভিত্তিস্থাপনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও আমরা তাঁকে দেখেছি অগ্রণী সাংস্কৃতিক নেত্রীর ভূমিকায়। তার ঐকান্তিক সহযােগিতায় গড়ে উঠেছে ‘ছায়ানট ও ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতাে সংগঠন। এ-ছাড়া ব্রতচারী আন্দোলন আর কাজী মােতাহার হােসেন ফাউণ্ডেশন'-ও তার কর্মকুশলতায় সমুজ্জ্বল। শিশু-শিক্ষার উদ্ভাবনী কর্মতৎপরতায় যুক্ত হয়ে গড়ে। তুলেছেন ‘নালন্দা বিদ্যালয়। সন্জীদা খাতুনের শিক্ষা কামরুননেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে। অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মানুবর্তী, সুশৃঙ্খল, সৃজনী ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বিরল কুশলতায় সমুজ্জ্বল ৮৪ বছর বয়সী সনজীদা খাতুন। এশিয়াটিক সােসাইটির অনারারী ফেলাে সন্জীদা রবীন্দ্রচর্চা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র-পুরস্কার, একুশে পদক এবং বাংলা অকাডেমি (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার) প্রদেয় রবীন্দ্র-পুরস্কার, বিশ্বভারতী প্রদত্ত ‘দেশিকোত্তম' ইত্যাদি।