গল্প হলেই ছােটগল্প হল না। গল্পটির একটা কৌতূহলােদ্দীপক আরম্ভ থাকতে পারে, থাকতে। পারে একটা চমকপ্রদ অন্তও। কিন্তু গল্পের ভেতরে অন্তর্বয়ান, কিংবা বিভিন্ন তাৎপর্যের বিবিধ স্তর, অথবা মানবপ্রকৃতির প্রতি কৌণিক দৃষ্টি না-থাকলে, বা অভিনব কোনাে অভিমুখ কিংবা জগজ্জীবনে মানবেরস্থিতির বিষয়ে বিচিত্র কিছু আলােকপাত না থাকলে সেটা গল্পই থেকে যাবে, ছােটগল্পের পরিভাষাটি পাবে না। বিশেষ কোনাে আবেগী বা মােহের বশে হয়ে-যাওয়া কোনাে ছােটগল্পের সীমা অতিক্রম করে মহৎ কোনাে ছােটগল্পকারও যদি গল্পের দেশে চলে যান, তবে ওটি আর ছােটগল্প থাকবে না। এর মানে ছােটগল্পে ঘটনা থাকবে না তা কিন্তু নয়। ঘটনা অবশ্যই থাকতে পারে, তবে ওটা নিছক কাহিনীতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। অপরপক্ষে ঘটনা পরিহার করেও যদি একটি বিশেষ ভাব বা মুডের মধ্যেই একটি মহামুহুর্তের উদ্ভব কোনাে লেখক তার গল্পে ঘটাতে পারেন—তবে সেটাও সার্থক ছােটগল্প হতে পারে বইকি। অবশ্য প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, আমার মতে ছােটোগল্প প্রথমে গল্প হওয়া চাই তার পরে ছােটো হওয়া চাই; এ ছাড়া আর-কিছুই হওয়া চাইনে। ইত্যাকার যাবতীয় কথাই পাঠকের মনে জাগতে পারে, এই গ্রন্থে সঙ্কলিত গল্পগুলাে পড়বার সময়।
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলী (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) বিংশ শতকের একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, যিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তাঁর ভ্রমণকাহিনির জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত এবং তাঁর রচনায় পাণ্ডিত্য ও রম্যবোধের এক অনন্য সংমিশ্রণ রয়েছে। শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় তিনি বিশ্বভারতী ম্যাগাজিনে লিখতেন। পরবর্তীতে ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন: দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী ইত্যাদিতে কলাম লিখেছেন।