“সেরা সন্দেশ ১৩৬৮-১৩৮৭” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপের কথা: শুরু হয়েছিল ১৩২০ সালে । আর শেষ ? অমান কথা ভাবাই যায় না । হারিয়ে গিয়েও যে আবার নতুন চেহারায় সামনে এসে দাড়ায়, সেই সন্দেশ আজও ছোটদের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ । নিতান্ত একটি পত্রিকা তো নয়, আশ্চর্য রকমের সুন্দর আর সন্ত্রান্ত একটি প্রতিষ্ঠান । সেই প্রতিষ্ঠানের দরজা দু-দুবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্ৰথমবার বন্ধ হয়েছিল সুকুমার রায়ের মৃত্যুর পর । আর দ্বিতীয়বার, ১৩৩৮ সালে । কিন্তু রবীন্দ্ৰনাথ ওই যে বলেছেন : “শেষ হয়ে হইল না। শেষ, সন্দেশ-এরও সেই একই ব্যাপার । সন্দেশ শেষ হলে তো ছোটদের তুলানন্দেরও সমাপ্তি, সন্দেশ তাই শেষ হয়নি । দ্বিতীয়বার বন্ধ হবার তিরিশ বছর বাদে সে আবার নতুন করে দেখা দিল । এবং এতই দীপ্ত সুন্দর কান্তি নিয়ে দেখা দিল যে, বিস্ময়ে আর আনন্দে ছোটদের তো বটেই, বড়দেরও যেন চোখের পলক আর পড়তে চায় না । দেখে, পড়ে একবাক্যে সবাইকে বলতে হয় যে, হ্যা, ছোটদের জন্য এমন ভাল পত্রিকা এ-দেশে আর কখনও বার হয়নি । রবীন্দ্ৰনাথ যেন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে আছেন এই পত্রিকার সঙ্গে । যে-বছর তিনি নোবেল পুরস্কার পান, সেই বছরেই উপেন্দ্ৰকিশোরের
“সেরা সন্দেশ ১৩৬৮-১৩৮৭” বইয়ের শেষ ফ্ল্যাপের কথা: কত ছবি, তার আর ইয়ত্তা নেই। কুড়ি বছরের সেইসব লেখা আর ছবির থেকেই বেছে নিয়ে, ছেকে নিয়ে বার করা হল এই অসামান্য সংকলন-সেরা সন্দেশ । কী আছে সেরা সন্দেশ্যে ? এর উত্তরে বলতে হয়, কী নেই ? রবীন্দ্রনাথের নাটিকা, শরদিন্দুর সদাশিবের কাণ্ডকাহিনী, তারাশঙ্করের গল্প, অজিত দত্তের ছড়া, সৃষ্টি নিয়েই এই দারুণবৈচিত্ৰ্যময় সংকলন । শুধু গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-ছড়া-শিকারকাহিনী-গোয়েন্দা উপাখ্যান-রূপকথা-অ্যাডভেনচার-ইতিহাস বা বিজ্ঞানই নয়, ম্যাজিক-ধাঁধা-হেঁয়ালি, ছবি আর শব্দের খেলা, এমনকি কাটুনিও বাদ যায়নি । সেরা সন্দেশ বাছাই করার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনজনে-লীলা মজুমদার, নলিনী দাশ ও সত্যজিৎ রায় । মাসিক সন্দেশ সম্পাদনার ভারও এরা তিনজনেই বহন করে আসছেন বহুদিন থেকে। রচনা নির্বাচনের পর সেগুলিকে সাজিয়ে দেবার কাজটা করেছেন সত্যজিৎ রায় । অজস্র নতুন ছবি এঁকেছেন তিনি এই সংকলনটির জন্য । সেরা সন্দেশ যেন একটি রেখে দেবার মতো বই হয়, এই কথাটা মনে রাখা হয়েছিল। যেমন রচনা নির্বাচনের সময়, তেমনি বইয়ের অঙ্গসজ্জার পর্বে । এই সংকলন। তাই শুধু আজকের দিনের ছেলেমেয়েদের জন্য নয়, আগামী যুগের শিশুরাও য়াতে বহুকাল ধরে এর কদর করে, সেটাও হল সেরা সন্দেশ-এর একটা প্রধান
সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) একজন প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক ও লেখক। কলকাতার রায় পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র কর্মজীবন বাণিজ্যিক চিত্রকর্ম থেকে শুরু হলেও ফরাসি ও ইতালীয় চলচ্চিত্রের প্রভাবের পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন। তার প্রথম চলচ্চিত্র, *পথের পাঁচালী* (১৯৫৫), ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে এবং এটি অপু ত্রয়ী হিসেবে পরিচিত। সত্যজিৎ রায় তার কর্মজীবনে ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এবং তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার লেখা কাল্পনিক চরিত্র ফেলুদা ও প্রোফেসর শঙ্কু অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), ভারত রত্ন ও পদ্মভূষণসহ নানা মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩ তম স্থান লাভ করেন। ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।