ছোটগল্পের কালজয়ী স্রষ্টা হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব আমাদের বিস্মিত করে। বাংলা ছোটগল্পকে তিনি হাতে ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনিই প্রথম ছোটগল্পে পৃথিবীর সব মানুষের অনুভব-উপলব্ধিকে শৈল্পিক মহিমা দিয়েছেন। এই মহিমান্বিত ভূখণ্ডে কেবল বড়দের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্যও রয়েছে অভাবনীয় সব শিল্পসম্পদ যা অল্পবয়সীদের পরিণত মানুষ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা হিসেবে অসাধারণ। সহজ কথা সহজ করে বলা যেমন কঠিন, তেমনি ছোটদের চিত্ত ও চিন্তার উপযোগী ভাব ও বিষয়কে ধারণ করে ছোটগল্প লেখার কাজটিও সহজ নয়। শিশু-কিশোরদের প্রাণের মানুষ হিসেবে তিনি তাদের মনের কথাকেই সহজ-সরল ভাষায় গল্পের অবয়বে উপস্থাপন করেছেন। তার কোনো কিশোর গল্পেই কাহিনি বা ঘটনার ঘনঘটা নেই। শিশুতোষ ভাব ও কল্পনার সমান্তরালে নিজেকে স্থাপন করে তিনি তাদের ভাষায়ই তাদের কথা বলেছেন। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের কিশোর গল্পে আমরা যে রবীন্দ্রনাথকে পাই, গণিতের হিসাবে তার বয়স যতই হোক না কেন, ভাব, কল্পনা ও ভাষার ঘনত্বে তিনি কিশোর রবীন্দ্রনাথ। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের এই যুগে বইয়ের সঙ্গে শিশুকিশোরদের দূরত্ব বেড়েছে এ কথা ঠিক, কিন্তু বইয়ের গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়ানো কঠিন। রবীন্দ্রনাথের কিশোর গল্পগুলোকে এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ হিসেবে পাঠ করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (জন্ম : ৭ মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (মৃত্যু : ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)। তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছােটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমােট ৯৫টি ছােটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খন্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পান।