ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ লেখক সেলিম আলফাজ অতিক্রম করেছেন তাঁর জীবনের ৫০ বছর (৩০ অক্টোবর, ১৯৫৭-২০০৭)। জীবনের অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁর কবিতা-কালের কাতর-জাগর স্মৃতি সেইসব স্বরাজ অদ্ভুত আনন্দ-বেদনায় উপস্থিত পাঠকের কাছে।
শীলনপর্বের চ্যুতি-দুর্বলতাসহ সে-সময়ের কবিতার কোনো পঙ্ক্তি পরিবর্তন না ক’রে সময়ের স্মারক হিসেবে সংকলিত হল কবিতাবলি সেইসব স্বারাজ।
বাংলাদেশের কবিতায় ২০ শতকের ৭০ দশকের কবিপ্রতিভা সেলিম আলফাজ এখন নিভৃতচারী হয়ে আছেন জীবিকার যাত্রাভিন্নতা। অথচ ৭০-এর দশক-মধ্যাহ্ন থেকে ৮০-এর দশক-মধ্যাহ্ন (১৯৭৬-১৯৮৫) পর্যন্ত কবি সেলিম আলফাজ দাপটের সাথে বিচরণ করেছেন কবিতাবিষয়ক সকল কর্মকাণ্ডে : লিখনে-আলোচনে, সভঅয়-সম্মেলনে, দর্শনীয় বিনিময়ে আবৃত্তি সন্ধ্যায়, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রিক অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাব্যকর্মে সৃষ্টিশীলতার যে-প্রাচুর্য দেখা দিয়েছিল, কবি সেলিম আলফাজ পুরোমাত্রায় সেই স্রোতে অবগাহন করেছেন। সেইসব স্বরাজ সেই সময়ের অনুবিশ্ব; যেন আরেক ‘কণ্ঠস্বর’-যুগ। তাঁর অধীত সময়ের সমস্ত বিষয় চিত্রায়িত হয়েছে সজীব প্রতিভার শব্দে। তার প্রমাণ তাঁর কবিতায় মিশেল রয়েছে কবি রফিক আজাদ-আবদুল মান্নান সৈয়দ-আবুল হাসান-মহাদেব সাহা-মুহম্মদ নূরুল হুদা-আসাদ চৌধুরীদের মেজাজ।
প্রকৃতপক্ষে সেলিম আলফাজ-এর কবিতায় বাংলা কবিতার হাজার বছরের ঐতিহ্যের স্মারক রয়েছে। ছন্দ, অলংকার, অন্ত্যমিল- উপমহাদেশীয় কাব্যতত্ত্বের প্রায় সকল উপকরণ তাঁর আয়ত্তে রয়েছে; প্রয়োগও করেছেন কোনো কোনো কবিতায়।
তিন দশক ব্যবধানেও সেলিম আলফাজ-এর কবিতা আমাদের বোধকে শাণিত করে, স্বপ্ন দেখায়।