সেইসব সন্ধ্যা (হার্ডকভার)
বইবাজার মূল্য : ৳ ২০২ (২০% ছাড়ে)
মুদ্রিত মূল্য : ৳ ২৫২
প্রকাশনী : বায়ান্ন ('৫২)
বিষয় : হরর গল্প , বইমেলা ২০২০
বই-সেইসব সন্ধ্যা ৫২বছর আগের কোন এক সন্ধ্যায় সাধনবাবু আর বীনা মজুমদার চোখ রেখে ছিলেন একে অপরের চোখে।তারপর থেকে প্রতি সন্ধ্যাই তাদের কাটতো একসাথে কোন সিনেমা হলে কিংবা রেস্টুরেন্টে।আবার কখনো বা পার্কে।কিন্তু একমাত্র ছেলে সুবোধের জন্মের পর তাদের সন্ধ্যাগুলো বদলে গেলো।পার্ক আর সিনেমা হলের বদলে ডিউটি শেষে ছেলের জন্যে কিছু নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বাকি সময়টুকু ছেলের সাথেই কাটাতেন।ছেলের কোন ইচ্ছাই অপূর্ন থাকতো না।বিশ্বকাপ দেখার জন্যে ছেলে টিভির বায়না করলে সাধনবাবু সেটাও পূরন করেন যা প্রতিবেশীদের কাছে ছিলো অকল্পনীয়।এভাবেই সুবোধকে নিয়ে সাধনবাবু আর বীনা মজুমদারের বেশ কেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু ৫২বছর পরে হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে বীনা মজুমদার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং কয়দিন পর মারা যান।মা মারা যাওয়ায় সুবোধের মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরপাক খায় যে তার মদ খাওয়ার টাকা আসবে কোথা থেকে?এতোদিন তো সেই টাকাটা মায়ের পেনশনের টাকা থেকেই আসতো।মা মারা যাওয়ায় তো এখন সেটাও আটকে যাবে।তাই সুবোধ চিন্তা করে তার মায়ের প্রাণ ফিরাবে।কোন এক সন্ধ্যায় সবার চোখের আড়ালে মায়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে এবং ৩বছর পরে লাশে প্রাণ ফিরবে-এ কথা বলে বাবাকে বুঝায়।লাশ বাড়িতে আনার পরে হিম ঠান্ডাতেও এক সন্ধ্যায় সুবোধ ২টা এসি এনে বাসায় লাগায়।যা দেখে প্রতিবেশীদের মনে প্রশ্ন জাগে যার অধিকাংশ উত্তর তারা নিজেরাই বানিয়ে নেয়।কিন্তু এসি,ফরমালিন দিয়েও সুবোধ মায়ের লাশে পচন ধরা কমাতে পারেনি।তাই কোন এক রাতে সে মেদিনীপুর থেকে ডোম নিয়ে এসে মায়ের লাশের নাড়িভুড়ি বের করে লাশ নিচের ঘরে নিয়ে ফ্রিজে ভরে রাখে ঘটনা এখানে শেষ না। সেটা জানতে চাইলে বই টা সংগ্রহ করে কোন এক সন্ধ্যায় পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
সেইসব সন্ধ্যা’ শিরোনামের মধ্যেই অতীত স্মৃতিকাতরতার একটা গন্ধ লুকিয়ে আছে। আসলে, সন্ধ্যার একটা স্বতন্ত্র রূপ আছে। সন্ধ্যা হলো আলো ও আঁধারের দ্রবণ। সন্ধ্যা বেশ রোমান্টিকও। শামস সাইদের উপন্যাসে নেমে আসা সেইসব সন্ধ্যাতেও চলে আলো–আঁধারের দ্বন্দ্ব। এই আলো–আঁধারের দ্বন্দ্ব উপন্যাসের নায়ক সুবোধের মনের ভেতর ক্রিয়াশীল। সুবোধের ভেতর সুবোধ নেই কিন্তু সে অবোধও নয়, বরং সে বহুলাংশে দুর্বোধ্য। প্রেমের কঠিন ঘাঁয়ে তার বোধ দুর্বিপাকে জড়াক্রান্ত। উদ্ভট মদমত্ততার ঘূর্ণাবর্তে সে দিশেহারা। তাঁর পার্থিব স্বার্থ আদায়ের নিদারুণ প্রচেষ্টা তাকে হীন চরিত্রে পরিণত করেছে। সে যেন এক কর্কশ বাস্তবতার ততোধিক বাস্তব প্রতিমূর্তি। নিজের উন্মত্ত জীবনের কাঁচামাল জোগাতে সে নিজের জন্মদাত্রীর লাশকেও ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হয় না। আসলে, আত্মসুখসন্ধানী মানুষ কখনো প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় না। মিথ্যা মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে এই মানুষগুলো আলো আর আঁধারের মধ্যকার পার্থক্যটাও একসময় ভুলে যায়। নিজের অস্তিত্বটাই তাদের কাছে বড় হয়ে ওঠে, নিজের স্বার্থ ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না। তারা ছাড়াও যে পৃথিবীতে আরও মানুষের অস্তিত্ব আছে, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়ার মধ্যেও যে একটা পরম আনন্দ, প্রশান্তির ব্যাপার আছে এই আত্মসর্বস্ব প্রাণীদের তা বোধের বাইরে। সুবোধ হচ্ছে এমনই এক আত্মসর্বস্ব জীব, যে নিজের পিতাকেও দিনের পর দিন ধোঁকার মধ্যে ফেলে রাখে আত্মস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। লেখক শামস সাইদের ‘সেইসব সন্ধ্যা’ জীবনের রূঢ় বাস্তবতার এক সজীব সকরুণ ছবি। বাস্তবতার বেপরোয়া চাকায় স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা কীভাবে পিষ্ট হয়ে যায়—বীণা, সুবোধ, সুমি, সাধনবাবুর জীবনে ডুব দিয়ে একজন পাঠক তা উপলব্ধি করতে পারেন সহজে। পড়তে পড়তে কাল্পনিক এই চরিত্রগুলো যেন বাস্তব জীবনের এমন অসংখ্য চরিত্রের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। পাঠক তার চারপাশে এমন হাজারো বীণা, সুবোধ, সুমি, সাধনবাবুকে আবিষ্কার করে ফেলে। এখানেই মনে হয় লেখক শামস সাইদের সার্থকতা। উপন্যাসের নায়ক সুবোধের জীবনেও প্রেম ছিল একসময়। তার সন্ধ্যাগুলোও ছিল রোমান্টিক। কিন্তু তার সেই রোমান্টিক সন্ধ্যাগুলো ঠুনকো স্বার্থেই হারিয়ে গেছে। সুবোধের বাবা সাধনবাবুও একজন প্রেমিক। তাঁর বায়ান্ন বছরের জীবনসঙ্গী বীণা, যাঁকে তিনি উপলব্ধি করেন হৃদয়ের সর্বস্ব দিয়ে, তিনি তাঁকে হারিয়ে যেতে দেননি কখনো। এখানেই বাবা ও ছেলের তফাত। সুবোধ ভীরু, অমানুষ। সে অপরিপক্ব প্রেমের আঘাতে দিকভ্রান্ত হয়ে ভুলে যায় তার দায়িত্ববোধ। জীবন থেকে সে শুধু পালিয়ে বেড়ায়। জীবনকে নতুন রূপে সাজানোর সাহস, প্রেমকে নতুনভাবে আলিঙ্গন করার স্বপ্ন সে দেখতে পারে না। অন্যদিকে তার বাবা প্রিয়তমা স্ত্রী বীণাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার চরম আঘাতেও তাকে অন্তরে আবিষ্কার করেন নতুনভাবে। বীণা মরে যাওয়ার পরও স্বামীর অন্তরে বেঁচে থাকেন প্রেম ও প্রত্যাশা নিয়ে। লেখক সুবোধের প্রতি নিজেও মনে হয় রুষ্ট ছিলেন। সুবোধের নাতিদীর্ঘ প্রেমের ট্র্যাজেডি ছাড়া তার চরিত্রে এমন কোনো মায়ার প্রলেপ তিনি দেননি, যার জন্য তার প্রতি আমাদের মায়া লাগে, কষ্ট লাগে। তার নাতিদীর্ঘ প্রেমের ট্র্যাজেডি তার প্রতি কোনো মায়ার রস উৎসারিত করে না। উপন্যাসের পুরো গল্পাবধি তার প্রতি আমাদের ক্ষোভ আর ঘৃণাই শুধু জন্মে। ‘সেইসব সন্ধ্যা’র ভাষা বেশ সমৃদ্ধ ও স্বতঃস্ফূর্ত মেটাফোরে ভরপুর। তবে ভাষার গতিশীলতাকে যতি চিহ্নের লাগামহীন প্রয়োগ খানিকটা বাধাগ্রস্ত করেছে বলে মনে হয়েছে। শামস সাইদের এই সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস ‘সেইসব সন্ধ্যা’ পাঠককে আকৃষ্ট করবে আশা করি।