সেদিন (হার্ডকভার)
বইবাজার মূল্য : ৳ ৩৭৫ (২৫% ছাড়ে)
মুদ্রিত মূল্য : ৳ ৫০০
প্রকাশনী : বইবাজার প্রকাশনী
বিষয় : রোমান্টিক উপন্যাস , বইমেলা ২০২০
মিস্টার ঝাঁকড়া তো আমাকে ফেলে বিলেতে গিয়ে খুব জোরসে পড়াশুনা চালাচ্ছিল। আর আমি এদিকে খালি বই নিয়ে টেবিলে বসে বসে ঝাঁকড়াকে ভাবতাম। আমার সবকটা বইয়ের মলাটে ধূসর+ঝুম লিখতাম। গোসলের সময় ঝাপসা হওয়া আয়নায় আঙুলের ছোঁয়ায় ধূসরের নাম লিখে সেই নামে ফ্লাইং কিস দিতাম। বার কয়েক কাছ থেকে চুমু খেতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত একবারো সেকাজ করে উঠতে পারিনি। যতবার করতে চাইতাম লজ্জায় লাল, নীল, ধূসর হয়ে যেতাম আমি। যেখানেই ধূসরের নাম দেখতাম সেখানেই আমার দুনিয়া থমকে যেত। নিঃশ্বাসবন্ধ হয়ে আসতো, পা চলতো না, বুকের মাঝে ভূমিকম্প হতো। ক্লাসে কোনোভাবেই মন বসতো না। ক্যাম্পাসের কপোত কপোতীদের দেখলেই একছুটে ধূসরের কাছে চলে যেতে চাইতাম। ধ্রুব ভাইয়া দেখা করতে এলেই ভাইয়ার মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে ভাবতাম ধূসরের সাথে ভাইয়ার চেহারায় এটা মিল, ওটা মিল। শুধু ধ্রুব ভাইয়াই নয়, আমার পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে আমি ধূসরকে খুঁজে ফিরতাম। জয়া যখন পড়ার টেবিলে মগ্ন হয়ে পড়ত তখন আমি গালে হাত দিয়ে বসে জয়াকে দেখতাম। ধূসরও অমন পড়াপাগল ছিল। সারাদিন ডিউটি করে এসে রাতে নিয়ম করে পড়তে বসতো আবার। যেই আমি জয়াকে টেবিলের কাছে ঘেঁষতে দেখলেই বিরক্ততিতে মুখ তেঁতো হয়ে যেত সেই আমিই কিনা ধূসরের পড়ুয়া স্বভাবের প্রতিফলন দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম কখন জয়া পড়তে বসবে। উফ্ এত পড়ুয়া বর আর পড়ুয়া বান্ধবী আমার কপালেই কেন জুটতে হলো? জয়া থেকে শুনেছিলাম রুদ্র গোস্বামীর একটা কথা আছে, "আমাদের বুকের বাঁদিকে হৃদয় নামের একটি প্রদেশ আছে। অথচ কেউই আমরা সেখানে শাসক নই। রাজা অথবা রানী হিসেবে সেখানে শাসন করে অন্য কেউ।" আমার জীবনে সেই রাজা, সেই শাসক চলে এলো। রাজার নাম ধূসর। আমি খুব করে চাইতাম ধূসর আমাকে একটা ফোন দিক, একটা! শুধু মাত্র একটা ফোন দিলেও তো পারে? কতদিন ওর ঝঙ্কার দেওয়া ধমক শোনা হয় না, কতদিন....। ফোন দিয়ে এক দুইটা ধমক দিয়ে শাসনও তো করতে পারে। রাজার মতো রাজা হবে, বউয়ের উপর তদারকি করবে তা না দূরদেশে পড়ে আছেন তিনি। ডাক্তারবাবু শোষণ করলেও মাথা পেতে নেব কিন্তু, উনি এই ভালোবাসার মরণব্যাধিতে আক্রান্ত বউকে ছেড়ে দিব্যি আছেন। এই রাজা আসলে কিচ্ছু পারে না, কিচ্ছু না! শুধু পড়ে পড়ে ঘুমোয়। রাত জেগে শুধু ভাবতাম আচ্ছা, এই কতদিনের কি তবে শেষ নেই? কোনো শেষ নেই? আমি হতাশ...! একসময় ধূসরের ভয়ে ঘুম উবে গিয়েছিল আর তারপর ঘুম হাওয়া হলো ধূসরের প্রেমে। জয়া রাত জেগে পড়তে পড়তে পাশ ফিরে আমায় জেগে থাকতে দেখলেই গাল ভরতি হেসে আবৃত্তি করতো, " রাত্রিভর স্বপ্ন দেখে ভোরসকালে ক্লান্ত। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, সে যদি তা জানতো! ” আমি চটে গেলেই বলতো, "আমি বলিনিরে বান্ধবী, গুণ সাহেব বলেছেন।" আমি তখন হেসে ফেলতাম, জয়াও হাসতো। দিন এমন করেই ঘুড়ির মতন উড়ছিল, শুধু আমিই ধূসরের সুতায় আটকে ছিলাম।