স্পাই এবং ক্রাইম থ্রীলার যদিও বিদেশে জনপ্রিয় কিন্তু আমাদের দেশে বিরল। কী কারণ? লেখকের অভাব, না পাঠকের এই স্বাদের বই পাঠ করবার অনিচ্ছা প্রকাশের বিরাগ। হয়ত এই তিনটি কারণেই আজ বাংলা সাহিত্যে উপযক্ত স্পাই-ক্রাইম থ্রীলারের দুর্ভিক্ষ চলছে। এই দুর্ভিক্ষের সমাধান করা আমার পক্ষে সম্ভব কিনা জানিনে, তবে আমার বন্ধ, প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে এই স্বাদের বই প্রকাশ করবার, যে উৎসাহ আমাকে দিয়েছেন তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। আমার সব গল্প, উপন্যাস একেবারে নিছক গলেপার ফানুস নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পরিচয় এই সব কাহিনী উপন্যাসে পাওয়া যাবে। কারণ বলা দরকার যে আমার সুদীর্ঘ্ জীবনের প্রায় ছাব্বিশ বছর আমি বিদেশে কাটিয়েছি, বিশেষ করে প্রায় চোদদবছর কাটে মধ্যপ্রাচ্যে, বেরুট, কায়রো, ইস্তামবুল, আমান, জেরুজালেম, জিদ্দা, কুয়েট শহরে। বেরুটে প্রায় আট বছরের প্রতিটি দিনে এবং রাত্রে আমি অজস্র অভিজ্ঞতা অর্জ্ন করেছিলাম এবং কার্যোপলক্ষে বিভিন্ন চরিত্রের মানষি, স্পাই, স্মাগলার, প্যালেস্টাইনী গেরিলা বাহিনীর সংস্পর্শে এসেছিলাম। এই লেবানন ষাট এবং সত্তর দশকে ছিল স্পাই স্মাগলার এবং বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক, সামরিক চক্ৰান্তের সব চাইতে বড় কেন্দ্র। আমার স্পাই, ক্রাইম থ্রীলারের সব নায়ক-নায়িকাদের পরিচয় পাওয়া যাবে। আশা করি পাঠক-পাঠিকারা আমার এই অভিজ্ঞতার কাহিনী ধৈর্য ধরে পড়বেন।
পরপর তিনবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের গোপনীয় খবর পাকিস্তানের পত্রিকাগুলিতে প্ৰকাশিত হবার পর ভারত সরকার বিচলিত হল। গোপনীয় সংবাদ বাজাবে বিক্রীর সন্দেহে তিনজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী, মকবুল পেশোয়ানী, অলোক ভাটিয়া এবং রাতিলাল মালিকানীকে চাকুরী থেকে ছাটাই করা হল। আর একদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের গবেষণা বিভাগের সদ্য আবিস্কৃত ইনফ্রারেড রে’ সে-সব দিয়ে কী করে নতুন আমেরিকান প্লেন এফ ১৬ এর গতিবিধি জানা যায়, সেই খবর পাকিস্তানের ‘জঙ্গ’ পত্রিকায় ছাপা হল। প্ৰধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্দেশ দিলেন যে এই সব গোপন খবর কী করে ফাস হল তার কারণ খুঁজে বার করতে হবে। এই তদন্ত করবার দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের গবেষণা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর অরিন্দম শাকসেনাকে দেওয়া হল। ইনটেলজেন্স ব্যুরোর কর্তা মাধবন শঙ্কর বললেন যে স্পাইকে খুঁজে বার করবার জন্যে কোন একজন স্পাইকে এই তদন্তের কাজে নিয়োগ করতে হবে। কারণ নিজের অপরাধ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে স্পাই নিশ্চয় এমন এক মারাত্মক ভুল করবে যে সে তার দোষ ঢাকতে পারবে না। আই, বীর বক্তব্য হল যে মকবুল পেশোয়ানী স্পাই-পাকিস্তানের কাছে খবর বিক্ৰী করছে। অতএব তাকে এই তদন্তের কাজে অরিন্দম শাকসেনার সহকারী হিসাবে নিয়োগ করা হল। ইতিমধ্যে অরিন্দম শাকসেনার স্ত্রী গীতা শাকসেনাকে রহস্যজনকভাবে খুন করা হল। কে এই মকবুল পেশোয়ানী? পুলিশ বলল: মকবুল খুনী গীতাকে খুন করেছে। মাধবন শঙ্কর বললেনঃ মকবুল হলেন স্পাই! এদিকে অলোকের স্ত্রী সুরাইয়া এবং তার রক্ষিতা সুমতি চৌধুরী অভিযোগ করলেন: আসল খুনী হল অলোক ভাটিয়া। কিন্তু মকবুল পেশোয়ানী বলল: অলোক অনেক গোপন খবর রাখে…. তাহলে আসল স্পাই খুনী কে? মকবুল পেশোয়ানী, না অলোক ভাটিয়া? কে এই রহস্যময়ী, কুহকিনী সুন্দরী সাবিনা আলমিদা যিনি মধ্য প্রাচ্যের বহু গৃহ-বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন? তার সঙ্গে এই সিক্রেট এজেণ্টের কী সম্পর্ক? স্পাই, সেক্স, মার্ডার, ব্ল্যাকমেলিং দিয়ে রচিত এই রহস্য-উপন্যাস।