সাগরতীরে লাল জামা গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ফুটফুটে এক শিশু। ভােরের স্নিগ্ধ আলােয় ঘুমন্ত শিশু ভেবে সেদিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন তুরস্কের এক ফটোজার্নালিস্ট। তিন বছরের নিস্পাপ আলান কুর্দির মৃতদেহটিকে ঘুমন্ত শিশু ভেবে ভুল করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। সহ্যসীমার বাইরে যখন কোন যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য আমাদের চোখে পড়ে, মস্তিষ্ক সেটাকে স্বস্তিদায়ক কিছুতে বদলে দিতে চায় বারবার। বালির ভেতর নিথর মুখ গোঁজা সেই ছবিটি ইতিহাস হয়ে যায়। শব্দের চেয়ে প্রবল ও প্রখর হয়ে ওঠে চিত্রগল্প। লক্ষ লক্ষ সিরিয়ান শিশুর উপর ঘটে চলা নিষ্ঠুরতার নীরব অথচ তীব্র বহিপ্রকাশ ছিল আলানের নিথর দেহ। একটি মৃত্যুর দৃশ্য গােটা বিশ্বজগতের চেতনাকে কীভাবে নাড়িয়ে দিতে পারে, কীভাবে উন্মােচিত করতে পারে উদ্বাস্তু সংকটের বৃহত্তর সমস্যাকে- আলান কুর্দির মুখ থুবড়ে পড়া মৃতদেহ তারই চাক্ষুষ প্রমাণ। বছর তিনেক আগে, সারা বিশ্বের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় আলানের ছবি। অথচ ২০১৮ সালে এসেও পাশ্চাত্য সমাজ শরণার্থীদের গ্রহণ করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়নি। সাধারণ মানুষও কিন্তু জোর গলায় শরণার্থীদের পক্ষে এগিয়ে আসেনি। খুব সহজেই বিস্মৃত হয়ে যাই আমরা, জোর করে দূরে ঠেলে দেই নির্মম বাস্তবতাকে। আবদুল্লাহ কুর্দি, তার স্ত্রী এবং দুই পুত্র রাতের অন্ধকারে একটি ভিড়ঠাসা নৌকায় তুর্কি উপকূলে পৌঁছান। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরােপে নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজে মাথা গুঁজতে চেয়েছিলেন তারা। ওই সীমান্ত পারাপারের সময় ভূমধ্যসাগরে নিজের মা রেহানা এবং বড় ভাই গালিবের সাথেই তলিয়ে গিয়েছিল আলান কুর্দি।