হাঁসের খাবার দেওয়া মাটির মালসাটা ছাঁই ছুবায় মেজে পরিষ্কার ঝকঝকে করে ধুয়ে নেয় শ্যামলী তারপর পেয়ারা গাছের নিচে তিন ইটের মাঝ খানে ভালোভাবে মালসাটা বসিয়ে দিয়ে নিজে আম গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায়। বেলা এখন মাথার উপর সূর্যের তাপ বেশ তাতিয়ে উঠেছে। ঠিক এ সময়টাতে প্রতিদিন হাঁসগুলো পানি থেকে উঠে খেতে আসে তার শ্বাশুড়ি হাঁসগুলোকে সকালের বেঁচে যাওয়া পান্তা গুলি মালসায় ঢেলে দেয়৷হাঁসগুলো মনের সুখে একটা আরেকটা কে ডিঙিয়ে পাড়াগাড়ি করে থলে ফুলিয়ে খেয়ে মনের আনন্দে আবারো পানিতে ফিরে যায়। শ্যামলী রোজ হাঁসগুলোর খাওয়ার দৃশ্য আড়াল থেকে মন ভরে দ্যাখে আর তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাঁসগুলি কেমন মোটা তাজা হয়ে উঠেছে। পালক গুলির মাঝে কেমন চকচকে আর তেলতেলে একটা ভাব। হয়তো কয়েক দিন পরেই ডিম দিবে। হাঁসেদের পরিপুষ্ট শরীর তাই জানান দিচ্ছে। একদিন শ্বাশুড়ি শ্যামলীকে ডেকে বলে- “বউ, ইসিগুলার একটু যত্ন নিও, কয়েক দিনের মইধ্যে ডিম দিব মনে লয়।" শ্বাশুড়ির কথায় শ্যামলী ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। তার পরের দিন থেকেই হাঁসেরা খেতে আসার আগেই শ্যামলী মাটির মালসাটা মেজে পরিষ্কার করে রাখে। আর ভাবে "হাঁস হইছে তো কি হইছে, ওদেরও তো জান আছে। রোগ রাগালি কখন কাকে আঁকড়ে ধরে কেউ তা বলতে পারে না।"রোগে শ্বাশুরির প্রিয় হাঁস গুলি মারা যাক শ্যামলী তা কোন মতেই চায় না।তি। প্রতিদিন মালসাটা পরিস্কার করা তার দায়িত্ব মনে করে। সপ্তাহখানেক পর শ্বাশুড়ি শ্যামলীকে কথার ফাঁকে আবারো বলে-"বউ কি হইলো হাঁসগুলার, এত খাওন দেই তারপরও ক্যান যে ডিম দিতাছে না?" শ্বাশুড়ির কথায় শ্যামলী মুখে কিছু বলে না। শুধু মনে মনে বলে -"হাঁস মুরগী কি কাউরে বলে কয়ে ডিম দিব?" শ্বাশুড়ি আবারো বলে, "মনে লয় খাওন আরেকটু বাড়াইতে অইবো!" রাগী শ্বাশুড়ির সামনে শ্যামলী পারত পক্ষে মুখ খোলে না।কি বলতে কি বলে ফেলে তা শুনে শ্বাশুড়ির মুখের ঝাঁঝালো কথা সে শুনতে চায় না।তাই ঘাড় নেড়ে শ্বাশুড়ির কথায় সায় দেয় শুধু।