সানজাক-ই উসমান (হার্ডকভার)
যারা অটোমান সম্রাজ্য এর উথান-পতন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক তারা এই বইটি পড়ে আশা করি উপকৃত হবেন।অটোমান সম্রাজ্য এর ইতিহাস ছাড়াও এতে রয়েছে দূরধর্ষ এবং নিষ্ঠুর মোঙ্গোলিয়ানদের ইতিহাস।যারা কিনা হত্যা করেছে অসংখ্য নিরঅপরাধ মানুষকে।সবার প্রতি অনুরোধ রইলো বইটি পড়ার।
উপন্যাস আর ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য কি? ইতিহাস পুরনো দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ। উপন্যাসে থাকে কিছু কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিভিন্ন ঘটনা যাদের ঘিরে আবর্তিত হয়ে থাকে। উপন্যাসের লেখকের অবাধ স্বাধীনতা থাকে।লেখক কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে ভাব,আবেগ,রূপ কল্পের সাহায্যে তার চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলেন। কিন্তু ঐতিহাসিকের হাত-পা বাঁধা। ঘটনার বাইরে কল্পনার কোনো সুযোগ নেই। তেমন কিছুর দিকে হাত বাড়ালে ইতিহাসের মৃত্যু ঘটে, বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবে। বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাস নির্ভর পটভূমিতে নির্মিত উপন্যাস অনেক হয়েছে। লিও তলস্তয়ের ওয়ার এন্ড পিস আলেকজান্ডার দ্যূমার থ্রি মাস্কেটিয়ার্স, উল্লেখযোগ্য নাম বাংলা ভাষায় ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস পূর্ব- পশ্চিম, প্রথম আলো, এবং সেই সময়। এসব উপন্যাসে কাহিনীকারের ইতিহাসের পটভূমিতে চরিত্র নির্মাণ করেছেন। কল্পনার রঙে জীবন্ত করে তুলেছেন একটি চরিত্র। পড়তে পড়তে পাঠক একদিকে সাহিত্যের স্বাদ পান, অন্য দিকে ইতিহাসের সেই সময়ের প্রেক্ষাপট উপলব্ধি করতে পারেন। মুশকিল হল পাঠক কখনো কখনো কখনো দ্বিধায় পড়ে যান, কোনটি ঐতিহাসিক সত্য আর কল্পনা।নিরেট ইতিহাস এদিক দিয়ে কিছুটা একঘেয়ে,ম্যারমেরে।আম জনতা তাতে রস খুজে পান না। সানজাক ই উসমান এই দিক দিয়ে এক অদ্ভুত সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। উপন্যাস নয়,ইতিহাস।কিন্তু গোটা ইতিহাস এগিয়েছে উপন্যাসের গল্প বলার ভঙ্গী এতটাই চমৎকার যে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন, নিজের আত্মসত্ত্বা। বইটি শেষ করার আগে যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে রচিত পশ্চিমাদের ইতিহাস ছিল আছে থাকবে। সভ্যতার উত্থান পতন সেখানে আপনাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে এই তথ্য কতখানি ভুল-ভ্রান্তিতে ভরা এশিয়া ও ইউরোপের উসমানীয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল সবকিছু ছাড়িয়ে গিয়েছিল অন্যের হাত ধরে হাত ধরে অন্যের হাত ধরে সেই সাম্রাজ্যের ইতিহাস। আপনারা তুলবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শাহজাদা জালাল উদ্দিনের প্রতিরোধ আপনার রক্তে নাচন ধরাবে। আপনি মুখোমুখি হবেন ইতিহাসখ্যাত রক্ত চরিত্র ড্রাকুলার জালালুদ্দিন রুমি ইবনে বতুতার। স্পেনের উত্থান-পতন ইতিহাস গুলো আপনার চোখের সামনে আসবে এর বাইরে অন্য এক পরিচয় ঘটবে আপনার আজকের সাধারণ লবঙ্গ গোলমরিচ একসময় বিশ্বরাজনীতিতে কতখানি অবদান রেখেছিল একসময়। সবকিছু জানতে পারবেন সালজাক ই উসমান পাঠের মাধ্যমে। ইসলামের ইতিহাস সঠিকভাবে জানআ মুসলমানের জন্য একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই আমি বলব যে সকলের উচিত সালজাক ই উসমান বইটি পড়া।
হাজার বছরের ইসলামী সাম্রাজ্যের ইতিহাসে রয়েছে অনেক রোমাঞ্চকর অধ্যায়। আরব ভূখন্ড থেকে শুরু করে ইসলামের সুমহান পতাকা কিভাবে সারা পৃথিবীর দিগ্বিদিক, মাগরীব থেকে মাশরিক পর্যন্ত জয় করে গেছে তাঁর ইতিহাস সুমহান ইতিহাস রচিত হয়েছে পৃথিবী জুড়ে অগণিত ইতিহাসবিদদের হাত ধরে। ইতিহাসবিদ কিংবা ইতিহাস গবেষকদের বাইরে ইতিহাসের চর্চা তথা ইতিহাস গবেষণার চর্চা সাধারণ মানুষদের মধ্যে অবর্তমান। সানজাক ই উসমান বইয়ের লেখক প্রিন্স মোহাম্মাদ সজল সে ধারারই চ্ছেদ ঘটিয়েছেন। ইতিহাসের তাত্বিক আলোচনা ও বর্ণনা পদ্ধতির বাইরে এসে তিনি ইতিহাস রচনা করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে, সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায়। তাঁর এই প্রচেষ্টার সুফসল সানজাক-ই-উসমান। মঙ্গোলিয়ান যাযাবর গোষ্ঠী থেকে উঠে আসা দুর্ধর্ষ যোদ্ধা চেঙ্গিস খানের ধ্বংসলীলার কবলে একের পর এক মুসলিম জনগোষ্ঠী যখন নিশ্চিহ্ন হয়েছে, তখন শুরু উসমানীয় সাম্রাজ্যের। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে চেঙ্গিস খান আর তার বর্বর মঙ্গোলিয়ান বাহিনীর হাতে। বিশ বছরের মধ্যে কোটি কোটি মুসলমানকে হত্যার মাধ্যমে পৃথিবী ব্যপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা মঙ্গোলিয়ান রাজত্ব ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে উসমানীয় খেলাফতের হাত ধরে। কে এই বীর উসমান? কোথা থেকে তাঁর উৎপত্তি? কিভাবে তিনি মঙ্গোলিয়ানদের দমন করলেন কিভাবে সারা পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশের শাসনভার মুসলমানদের হাতে এলো জানতে হলে পড়তে হবে সানজাক-ই-উসমান। তার আগে আপনাকে চেঙ্গিস খানের আদ্যোপান্তের ইতিহাসের ভেতর দিয়ে এক লম্বা ভ্রমণের মাধ্যমে পার করতে হবে মঙ্গোলিয়ান স্তেপ থেকে খাইবার পাস পর্যন্ত সুবিশাল রাজত্বের এক দীর্ঘ পথ। ইসলামের ইতিহাসে চেঙ্গিস খানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাকে না জানলে ইসলামের ইতিহাস জানা অসমাপ্ত থেকে যায়, সেই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই লেখক দীর্ঘ কলেবরে চেঙ্গিস খান আর তার মোঙ্গল রাজত্বের বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত সুন্দর উপস্থাপন ভঙ্গীতে। ইতিহাসের পাঠকদের জন্য বইটি কোনো তাত্বিক ইতিহাসের বই নয়, কিন্তু ইতিহাস পড়ে বা জেনে যারা আনন্দ পান, তাঁদের জন্য বইটি একটি সুখপাঠ্য গ্রন্থ হবে বলেই আমি মনে করি।