"সামাজিক ব্যবসা" বইটি সম্পর্কে ভেতরের কিছু অংশ:
বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে দুটি তত্ত্ব’ দীর্ঘদিন যাবত প্রতিষ্ঠিত। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র । নানা কারণে সমাজুতন্ত্র এখন আর আলােচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই। কিন্তু দোর্দণ্ড প্রতাপে পুঁজিবাদ’ বিরাজ করছে সারা পৃথিবী জুড়ে। সেই পুঁজিবাদও আজ নানা সংকট ও প্রশ্নের সম্মুখীন। বিশ্বের ধনবাদী দেশগুলাে এখন আর সনাতন পুঁজিবাদে সন্তুষ্ট নয়। তাদের অনেকে মনে করেন পুঁজিবাদের একটা সংস্কার হওয়া দরকার। এরকম বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ঋণের উদ্ভাবক নােবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন তার সাম্প্রতিক সামাজিক ব্যবসা' তত্ত্ব। এই ব্যবসায় বিনিয়ােগকারী একটা সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিনিয়ােগ করবেন, কিন্তু সেই ব্যবসা থেকে কোনাে মুনাফা গ্রহণ করবেন না। শুধু বিনিয়ােগের অর্থ তুলে নিতে পারবেন । মুনাফার অর্থ দিয়ে নতুন কোনাে সামাজিক ব্যবসা শুরু করতে পারেন অথবা বর্তমান ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে পারেন। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় মুনাফা বৃদ্ধির যে উন্মাদনা দেখা যায় তার বাইরে ব্যবসাকে সামাজিক কল্যাণের জন্যে নিয়ে আসাই সামাজিক ব্যবসার মূলকথা। একই সঙ্গে দেশে বিরাজমান নানা সমস্যার সমাধান করা হবে অনুদান বা চ্যারিটির ভঙ্গিতে নয়, সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক ভঙ্গিতে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মুহাম্মদ ইউনুসের জন্ম (১৯৪০) বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করার সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ১৯৭৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প শুরু করেন। এখন ক্ষুদ্র ঋণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংক মডেল এবং তার উদ্ভাবক। মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। সম্ভবত বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত মানুষ তিনিই।
‘গ্রামীণ ব্যাংক’-এর সাফল্য তাকে বিশ্বজোড়া পরিচিতি এনে দিয়েছে। এ পর্যন্ত পনেরােটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তেরােটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও তিনি পেয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
ড. ইউনুস ইউ এন ফাউন্ডেশন' সহ অন্তত দশটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্য বা উপদেষ্টা । সম্প্রতি তিনি জাতিসংঘের 'UNAIDS-এর ‘ইন্টারন্যাশনাল গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’-এর সম্মান লাভ করেন। ‘গ্রামীণ ব্যাংক' ছাড়াও বাংলাদেশে গরিবদের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। '২০০৬-এ গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে নােবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত।