আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। কখনো কখনো মনে হয় হারানোর নামই জীবন। সেই হারিয়ে যাওয়ার পর কেউ কেউ স্মৃতিতে বাঁচতে আরম্ভ করে। স্মৃতি উষ্ণ হলেও বুকের মধ্যে হীম-রাত তৈরি হয়। তিন নয়, সে মানুষ ভিড়ের মধ্যেও একা হয়ে বহুদিন শীতঘুমে কাটিয়ে দেয়। স্মৃতি-ঘোরে থাকা মানুষটার চতুর্পাশে সবকিছু যায়-আসে, সে কেবল স্থবির হয়ে পড়ে থাকে। আসলে স্থির সে নয়, স্থানুও না। সবার মধ্যে থেকে একা। গহন মনে কোলাহল নিয়ে শহুরে কোলাহল থেকে পালাতে চায়। সমাজের ‘স্বাভাবিক’ মানুষদের মধ্যে সে বড়ো বেমানান।
আর শিল্পীরা তো জন্ম-ক্ষ্যাপা। পৃথিবীর নিয়ম তারা মানে না কখনও। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্রও মানে না। শিল্পের সততা ধরে রেখে এই একবিংশ শতকে নিজের মধ্যে এক ইউটোপিয়া বয়ে বেড়ায়। আসলে তা হয়তো নয়। সে-ও আর দশটা মানুষের মতো সমাজ, সংসার, ক্যারিয়ার নিয়ে জীবনটা গুছিয়ে নিত। একটু সময় প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই হারিয়ে গেল কিছু। রয়ে গেল স্মৃতি। স্মৃতি একটা মানুষের, কিংবা অনেকের। স্মৃতি এই শহরের। এমনকি হয়তো অন্য জন্মের। এমন এলোমেলো এক শিল্পী, এই সংসারে বড়ো বেমানান—রুসওয়া।
একজন শিল্পীর নস্টালজিয়া আর ঘোরের মধ্যে দিয়ে এ উপন্যাস, তার পাঠককে ভালোবাসার নানা রং আর এই শহরের বদলে যাওয়ার গল্পটা বলতে চায়। এক জীবনে শিল্পী আসলে কোনো যোদ্ধার তুলনায় কম ত্যাগ করে না। ইউলিসিসের চেয়েও দীর্ঘ তার যাত্রা। অবশ্য এ-কালে পেনিলোপেরা অপেক্ষা করে না। তাই, একবিংশ শতাব্দীতে প্রেমিকার অপেক্ষায় থাকা শিল্পী হয়ত কায়েস, ফরহাদ, মীর্জার মতোই মজনু। কিন্তু সংসারে সে বদনাম—রুসওয়া।