প্রকৃতি ও প্রেমের কবি জীবনানন্দ দাশের "রূপসী বাংলা" অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। "রূপসী বাংলা" এমন এক কাব্যগ্রন্থ, যেখানে বাংলার রূপ সামগ্রিকভাবে সংহত হয়ে আছে। জীবনানন্দ দাশ বাংলার নদী, মাঠ, জোছনা, শিশির, নক্ষত্র, লক্ষ্মীপেঁচা, ডুমুরের ফুল ভালোবেসে হৃদয়ের গহীনে যে শব্দমালা গেঁথেছেন তার উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছেন কাব্যগ্রন্থের পরতে পরতে। এই বাংলার প্রকৃতির প্রতিটি অনুষঙ্গ কবির সত্ত্বার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তিনি তাঁর জীবনসত্ত্বা দিয়ে গ্রহণ করেছেন প্রকৃতিকে আর প্রকাশ করেছেন সমগ্র কবিসত্ত্বা দিয়ে। প্রকৃতিকে তিনি ব্যবহার করেছেন বিচিত্রভাবে। এ কাব্যগ্রন্থে আবহমান বাংলাকে অপরূপ মায়াময় করে তুলেছেন কবি।
জীবনানন্দ দাশ
জন্ম : বরিশাল, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯। আদি নিবাস গাওপাড়া, গ্রাম- বিক্রমপুর। পিতা বরিশাল ব্রজমােহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশ। বরিশাল ব্রজমােহন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক (১৯১৫), বরিশাল ব্রজমােহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ (১৯১৭) সালে । কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ (১৯২১) ডিগ্রী লাভ। ১৯২২-১৯২৮-এর কলকাতা সিটি কলেজে, ১৯২৯-এ বাগেরহাট কলেজে ও ১৯২৯-১৯৩০-এ দিল্লীর রামযশ কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৩০-এ ঢাকার লাবণ্য গুপ্তের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। কিছুকাল বেকার জীবন যাপন ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কিছুদিন কর্ম সম্পাদন। কিছুকাল ব্যবসা করার পর ১৯৩৫-এ বরিশাল ব্রজমােহন কলেজে অধ্যাপনার চাকরি লাভ। ১৯৪৬ পর্যন্ত এ কলেজে অধ্যাপনা। অতঃপর কলকাতা গমন। ১৯৪৭-এ ‘দৈনিক স্বরাজ’-এর সাহিত্য বিভাগ সম্পাদনা। ১৯৫১-১৯৫২- তে খড়গপুর কলেজে, ১৯৫২ তে বড়িষা কলেজে ও ১৯৫৩ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হাওড়া গার্লস কলেজে অধ্যাপনা।
প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থ : 'ঝরা পালক' (১৯২৮), ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬), বনলতা সেন' (১৯৪২), সাতটি তারার তিমির' (১৯৪৮), রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭) তিনি একজন কথাসাহিত্যিকও। মৃত্যুর পর প্রকাশিত উপন্যাস : মাল্যবান (১৯৭৩), সতীর্থ (১৯৭৪)। গল্প সংকলন : ‘জীবনানন্দ দাশের গল্প’ (১৯৭৯)। জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত রচনাবলী খণ্ডে-খণ্ডে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। মৃত্যু : কলকাতা, ট্রাম দুর্ঘটনা, ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪।