‘কিশোর সাহিত্য’ ও 'কিশোর উপযোগী সাহিত্য' দুটি আলাদা বিষয় হলেও, বাংলা সাহিত্যে দুটিরই আজন্ম আকাল রয়েছে।
কিশোর কিশোরীর মনোজগৎ বড়ো বৈচিত্র্যময় ও সংকটপূর্ণ। আমরা প্রত্যেকেই ওই সময়টি পার করে এলেও কী এক জাগতিক ঘূর্ণিপাকে সব ভুলে বসে থাকি। ওদের ওই বয়সটির যে জটিল আবর্তে ওরা মা বাবার স্নেহময় সান্নিধ্য চায়, সে সময়টায় আমরা ওদের কঠিন শাসনের বেড়াজালে আটকে অধিকাংশ স্বপ্ন ও সম্ভাবনা ভূমিষ্ঠেই বিলীন করে দিই। এসময়ের অভিভাবকত্ব ও কৈশোর, উভয়েরই খুঁটিনাটি উঠে আসতে পারে 'কিশোর উপযোগী একটি সাহিত্যে'। এধরণের একটি গল্প বা উপন্যাসে তুলে ধরা যায় ওই সময়কালীন পরিবেশ-পরিস্থিতি, ঘটমান ও ঘটা-উচিৎ ঘটনাবলীর সন্নিবেশ, এবং আরো অনেক কিছুই। কৈশোরের নিবিড় পরিচর্যাকারী শিক্ষক ও সুলেখক শায়লা শবনম তার কিশোর উপযোগী উপন্যাস 'রূপকথা নয় তবুও রূপকথা'য় চমৎকারভাবে এসবের অনেকাংশই তুলে ধরেছেন দারুণ দক্ষতায়। উপন্যাসটিতে একটি সমাজের ছেলে-মেয়ের পাশাপাশি বেড়ে ওঠা, নানা ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান, নারীর ক্ষমতায়নের সঙ্গে গ্রামীণ বেশকিছু সহজাত সৌন্দর্যের এমন বাস্তব বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে পাঠকের খুব সহজেই এই মধুর ভ্রম হতেই পারে যে, লেখক নিজে এসকল বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
চমৎকার এই উপন্যাসটি অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে পড়বেন, এমনটিই আমার আশা রইল।