রুপাইতার রূপকথা ও অন্যান্য গল্প

রূপাইতা ফোন ধরতে টুমপু বলল-
তুই নাকি ছুটিতে তোর দাদুবাড়ি যাচ্ছিস? তোর কী সেখানে ভালো লাগবে?
হ্যাঁ, তোকে তো বলাই হয়নি। বলল রুপাইতা।
সত্যি আমরা দাদুবাড়ি যাচ্ছি। বাবা গতকাল ট্রেনের তিনটি টিকেট কিনে এনেছে। শুক্রবার সকালে আমাদের ট্রেন ছাড়বে।
বাবা বলেছে, আমার সিটটা জানালার পাশে। সেখানে বসে আমি কত কত গ্রাম দেখতে দেখতে যাব, একবার ভেবে দেখ!
বাবা বলেন, আমার এসব দেখা দরকার। বড়ো বড়ো মাঠ। আকাশ, নদী-সমুদ্র দেখলে নাকি মন বড়ো হয়। বাবাটা যে কী সব বলে!
আর কি বলেছে জানিস। বলে দাদু বাড়ি গিয়ে আমার অনেক অনেক গাছ লাগাতে হবে। বাবাই মাটি খুঁড়ে দেবে। ছোটকাকুও সঙ্গে থাকবে। আমি শুধু গাছ লাগিয়ে সুন্দর করে মাটি দিয়ে দেব আর পানি ঢেলে দেব।
বাবা বলে, আমাদের সবার অনেক অনেক গাছ লাগানো উচিৎ। গাছ আমাদের কত উপকার করে তা তো তুই জানিস।
আর পথে যেতে আমাদের অনেক অনেক নদী পড়বে। বলল বাবা। কত কত নদীর ছবি দেখেছি আমি। কেমন আঁকাবাঁকা। ঢেউ তোলা পানি। নদী যে কত সুন্দর সে তো আমি জানি। কেমন মজা হবে বল।
মা বলেছে, ট্রেন থেকে নেমে এক ঘণ্টার পথ। কিন্তু কী জানিস, পাহাড়ি পথ। আঁকাবাঁকা আর উঁচুনিচু। পাহাড়ের ওপর দিয়ে যখন গাড়ি যায়, তখন নিচের বড়ো পাহাড়টাকেও দেখায় এইটুকুন! বুঝি নদীড় পাড়ে হাতে গড়া মাটির ডিবি।
একবার ভাব কেমন উঁচু দিয়ে যায় গাড়ি। ভাবলেই কেমন পুলক জাগে মনে।
ছোটোকাকু কাল রাতে বলল, নীল পাহাড়ের কথা।
বিশাল পাহাড় জুড়ে কত কত গাছ। তবে কি সব গাছেই নীলফুল ফোটে। রাত্রিবেলা পরি নামে পাহাড়ে! সবাই নাকি দেখেছে তাদের।
গভীর রাতে দল বেঁধে আসে পরিরা। তারপর সবাই মিলে নাচে। কাকুও দেখেছে তাদের নাচ। তারা নাচলে কেমন নীল নীল আলোর ঝিলিক ছোটে পাহাড়ে। তাদের নাচের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে পাহাড় ছাড়িয়ে। সারারাত নেচে ভোর হতে কোথায় যেন মিলিয়ে যায় তারা। কেউ তা বলতে পারে না।
পাহাড়ে  সূর্য ওঠে খুব সকালে।
সবুজ পাহাড়ের পেছন থেকে জেগে ওঠে লালরঙা সূর্য। মিষ্টি হেসে ছড়িয়ে দেয় রোদ। পাখিরা গান গেয়ে উড়াল দেয়। হেসে ওঠে পাতারা। ঝলমল করে ওঠে সুন্দর সকাল।
বিকেলে কত কী ছবি আঁকে মেঘেরা। পাহাড়ের ওপর যেন আরও একটা পাহাড় জমে ওঠে মেঘেদের। সূর্যের আলোয় মেঘের পাহাড় হয়ে ওঠে রঙিন। ভেসে ওঠে কত শত ছবি। সেই রঙিন মেঘের নিচ দিয়ে বাড়ি ফেরে পাখিদল।
লাল সূর্যটা ডুবে যেতে টুপ করে নামে সন্ধ্যা। ঠিক তখন অন্ধকারে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে ওঠে। কী মিষ্টি দেখতে লাগে তাদের। আর ঝিরঝিরি হাওয়ায় ভেসে আসে বকুল ফুলের ঘ্রাণ। আহা, কেমন সুন্দর সব দৃশ্য ওখানে। আর তুই বলছিস ভালো লাগবে কি না।
আমি তো অস্থির হয়ে আছি, কখন আমাদের ট্রেনটা হুইসেল বাজিয়ে ছুটবে। কুঝিকঝিক। কুঝিকঝিক। কুঝিকঝিক।...
তাই বলছি, তুই যদি যেতে চাস তো বল। আজই বাবাকে বলে আরও একটা টিকেট করিয়ে রাখি, তোর জন্য।
যাবি? প্রেম।”