জীবন যখন সংকটাপন্ন, অস্তিত্বের মর্মমূলে এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর তীব্র আঘাতে মানুষ থেকে প্রাণিকুল দিশেহারা, খাদ্য সংকট, মানবিক সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেউ কারো দিকে ফিরে তাকাবার অবসরটুকু মিলছে না তখন ঘরবন্দি মানুষের হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কীই বা করার থাকে। প্রতিদিন অগণিত মৃত্যুর মিছিল- গোরস্তানে, শ্মশান ঘাটে একের পর এক শবদেহ অথচ শেষ বিদায়ে আপনজন কেউ পাশে নেই এমন মর্মদাহী বিদায় কে কবে ভেবেছে? যুগে যুগে মহামারি এসেছে। সভ্যতার অগ্রগতি এর গতিরোধ কতটা করতে পেরেছে তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। খ্রীস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে 'প্লেগ অব এথেন্স', ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘জাস্টিনিয়ান প্লেগ, ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্ল্যাক ডেথ', ১৯১৮-১৯২০ এ স্প্যানিশ ফু', ১৯৫৭-৫৮ তে 'এশিয়ান ফু'। এছাড়া এইচআইভি, কলেরা, গুটিবসন্ত, সার্স, মার্স, ইবোলা আর এখন কোভিড-১৯। বিজ্ঞানের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত আর অপর্যাপ্ত ব্যবহার যেমন প্রকৃতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে তেমনি প্রকৃতিও বন্যা, খরা, সাইক্লোন, মহামারি, অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে করেছে বিপর্যস্ত। এইতো দুই হাজার বিশের ফেব্রুয়ারির কথা। বইমেলার চিরচেনা হট্টগোল, ভিড়বাট্টা, হাসি-ঠাট্টা শেষে আমরা যে যার বাড়ি ফিরছিলাম। কিছুটা ক্লান্তি আনন্দ সব নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলাম বইমেলা পরবর্তী আমাদের জলধি পাঠ পর্যালোচনা সংখ্যার কাজ নিয়ে। ভাবছিলাম, উপায় খুঁজছিলাম কেমন করে বাংলাদেশ থেকে জলধি নির্বাচিত বই পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো যায় আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বইগুলো বাংলাদেশে আনা যায়। ভাবনার জগৎটায় হঠাৎই কিছু কালো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ভর করল। দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করল দ্রুত। কী থেকে যে কী হলো! শিক্ষা, সভ্যতা, সাহিত্য টিকিয়ে রাখতে হলে দেশ-কাল ভুলে সব মানুষের সাথে মেশো, নিজেকে জানতে ও জানাতে হলে বেরিয়ে পড়ো, দেশরক্ষায় দল-মত ভুলে সংঘবদ্ধ হও- এসব উৎসাহবচন আর সত্যভাষণের পরিবর্তে বলা হলো বাঁচতে হলে ঘরে যাও, সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে একা হও, দেশ বাঁচাতে যোগাযোগহীন থাকো।