ফিলিস্তিন। নিজ ভূমিতে আজ যারা পরাধীন। পৃথিবীতে জীবিতদের সবচেয়ে বড় কারাগার। দখলদার ইহুদীদের নির্মম অত্যাচারে জনজীবন যেখানে বিপর্যস্ত। বোমার শব্দে যাদের হয় সূর্যোদয়, স্নাইপারের গুলিতে হয় সূর্যাস্ত। পবিত্র ‘মক্কা-মদিনার’ পর মুসলিমদের তৃতীয় তীর্থস্থান ‘বায়তুল মাকদিস’ যেখানে অবস্থিত। শেষ জামানায় ঈমান যেখানে নিরাপদ থাকবে সেই পবিত্র ভূমি হচ্ছে—সিরিয়া। লক্ষাদিক নবী-রাসুলদের আগমনে ও পদচারণায় যে ভূমি ছিল অমরকানন তা আজ বিশ্ব মোড়লদের নখরাঘাতে বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত। ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা প্রদর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত সেই সিরিয়া। পৃথিবীর সবচে’ বড় কবরস্থান। মানবতার লেশমাত্র নেই যেখানে।মনে আছে কি? গোলাপের মতো নিষ্পাপ শিশু, সেই ‘আইলান কুর্দির’ কথা। তুরস্কের বদ্রুম উপকূলীয় সাগর তটে পড়ে থাকা নিথর দেহ যা বিশ্ববিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল ক্ষণিকের তরে। আরেক ফুল শিশু একরাশ ক্ষোভ নিয়ে যে জান্নাতে চলে গেছে “আমি আল্লাহর কাছে সব কিছু বলে দিব” বলে প্রচণ্ড অভিমানে। জালিমের শ্যেনদৃষ্টির স্বীকার হয়ে সিরিয়া আজ রক্তস্নাত নরকে পরিনত। মুসলিমদের মাঝে বসবাসের ভিন্নতা থাকতে পারে। ভাষা আর বর্ণের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু তাদের আকিদা এবং মানহাজ এক ও অভিন্ন। শুধুমাত্র এক আল্লাহর তাওহিদে বিশ্বাসী। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ একদেহ সমতুল্য। দেহের কোন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হলে সমগ্রদেহে যেমন তা অনুভূত হয়, তেমনিভাবে বিশ্বের যে প্রান্তেই কোনো একজন মুসলিম আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা আমাদের দেহেও অনুভূত হতে হবে। আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ইয়ামান, শাম ও চীনে মুসলিম উম্মাহ আঘাতপ্রাপ্ত। তা কী আমাদের দেহে অনুভূত হচ্ছে? মুসলিম মা-বোনদের ক্রন্দন ও সতীত্ব রক্ষার করুন আর্তনাদ আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে কী? সমুদ্রতটে পড়ে থাকা নিথর দেহ আমাদের বিবেকে কী একটুও নাড়া দিচ্ছে? কাল ‘বিচার দিবসে’ মহান রবের নিকট তারা যখন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করবে, তখন কি জবাব দিব আমরা? তার উত্তর কী প্রস্তুত করে রেখেছি?একজন বাবার পক্ষে তাঁর পুত্রের মৃত্যু মেনে নেয়া যতটা সহজ, চোখের সামনে একজন মেয়ের সম্ভ্রমহানি মেনে নেয়া ততটাই কঠিন। একজন ভাইয়ের পক্ষে তার বোনের, একজন মায়ের পক্ষে তার মেয়ের, একজন স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীর সম্ভ্রমহানি ও সতীত্বনাশ দর্শন কতটা কষ্টের তা আমরা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের মা-বোনদের দিকে কেউ যদি কুদৃষ্টিতে তাকায় তাতেই আমরা দাতে দাত পিঁষে তার ওপর হামলে পড়ার চিন্তা করি। আজ ফিলিস্তিন, সিরিয়া, শাম, এবং অন্যান্য স্থানে আমাদের মা-বোনরা লাঞ্ছিত, অপমানিত। তারা সম্ভ্রম হারাচ্ছে তাতে কী আমাদের কোনো অনুভূতি হচ্ছে? আমাদের বিবেকে কী একটুও নাড়া দিচ্ছে? জিহাদের ময়দানে মাজলুমানদের সাথে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও দু’ফোঁটা তপ্তাশ্রু ফেলে কায়মনোবাক্যে মহান রবের দরবারে দু’আ তো করতে পারি? এক মুসলিম অন্য মসুলিমের আয়না স্বরূপ। মাজলুম মুসলিমদের দিকে তাকিয়ে একটু কল্পনা করে দেখি মাজলুমানের আয়নায় আমার কেমন প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হচ্ছে? ‘রক্তলিপি’সিরিয়া-ফিলিস্তিনের এক রক্তস্নাত রক্তাক্ত উপাখ্যান। যে বইয়ের প্রতিটি পাতার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে ওঠেছে মাজলুম মুসলিমদের সকরুণ চিত্র। প্রতিটি গল্প পড়ে পাষাণ্ড হৃদয়-ও বিগলিত হতে বাধ্য।