গ্রাম-বাংলার মাঠঘাট, গাছগাছালি এবং মানুষ ও নিসর্গরূপের চিত্রণে আহমদ রফিকের কাব্যিক তন্ময়তা বর্তমান কবিতা সংকলনে ভিন্নরূপ নিয়ে পরিস্ফুট। ইতঃপূর্বে তার হাতে চিত্রিত গ্রাম-বাংলার রোমান্টিক নিসর্গ (বাউল মাটিতে মন) এবার রক্তের আল্পনায় আরেক চিত্ররূপের অভিব্যক্তি ঘটিয়েছে। উনসত্তর-একাত্তর এই কালপর্বের বাস্তবতায় একদিকে বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অন্যদিকে পাক-পশুশক্তির রক্ততৃষ্ণার ভয়াবহ উন্মাদনা- এই দুইয়ের তাৎপর্যে চরিত্রবান কবিতা-গুচ্ছের সংকলন ‘রক্তের নিসর্গে স্বদেশ’। কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ হিসেবে এটি যেমন নতুন চরিত্রগুণে বিশিষ্ট তেমনি পেছনে ফেলে-আসা আন্দোলিত অভিজ্ঞতার চিত্ররূপে সমৃদ্ধ। প্রতিটি কবিতায় জাতীয় জীবনের বহুচেনা দুর্যোগ-দুর্ভোগ ও সংগ্রামের কালিক চিত্র ধরা রয়েছে যা পাঠককে সেই দুঃসময়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে। সঙ্গে বাড়তি উপহার ভাষা-সংগ্রামের পঙ্ক্তিমালা।
আহমদ রফিক
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট আহমদ রফিক (জন্ম: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে পরিচিত, তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তার শিক্ষাজীবন বারবার বিপর্যস্ত হয়। শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, মূলত সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং বর্তমানে সম্পূর্ণ সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। তিনি রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে *শিল্প সংস্কৃতি জীবন* (১৯৫৮), *আরেক কালান্তরে* (১৯৭৭), *ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য* (১৯৯১) এবং *রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প* (১৯৯৬) অন্তর্ভুক্ত। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে *নির্বাসিত নায়ক* (১৯৯৬), *বাউল মাটিতে মন* (১৯৭০), *রক্তের নিসর্গে স্বদেশ* (১৯৭৯) উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে একুশে পদক এবং কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি লাভ করেন।