রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়। কারও কাছে তিনি মহীয়সী এক নারী, একজন বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব। কারও কাছে তিনি নারীশিক্ষার অগ্রদূত, কেউবা তাঁকে জানেন সংগঠকরূপে, কেউ সাহিত্যিকরূপে । কেউবা সমাজসংস্কারকের ভূমিকায় তাকে চিনেছেন; নারীমুক্তির পথিকৃৎ ও নারীবাদের। প্রবক্তা হিসেবে তাঁর অবদান চিহ্নিত করেছেন। জেন্ডার সমতায় বিশ্বাসী রোকেয়া ছিলেন চিন্তাচেতনায় ইহজাগতিক। অসাম্প্রদায়িক ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি। বস্তুতপক্ষে তিনি কোনো একক পরিচয় বহন করেন না। এবং যে-কোনো একটি পরিচয়ের ডোরে তাকে বাঁধা যাবে না । বহুমাত্রিকতায় তার পরিচিতি। সব পরিচয়ের সমাহারে তিনি ছিলেন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর পরিচিতির ব্যাপকতার মধ্যদিয়ে তাঁকে চিনতে হবে। কেননা তার কর্মক্ষেত্র কোনো আলাদা আলাদা প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ ছিল না। বরঞ্চ একটি থেকে অপরটি উৎসারিত হয়েছে। তাঁর দর্শন ও কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে আধুনিকমনস্কতার ছাপ। এ সকল কারণে রোকেয়া সময় ও যুগকে অতিক্রান্ত করেছেন; হয়েছেন কালজয়ী, কালোত্তীর্ণ । দ্বিতীয় রোকেয়ার আবির্ভাব সুদূরপরাহত। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে রোকেয়ার মহাপ্রয়াণের পরবর্তী আট দশকে বাংলাদেশে পরিবর্তন এসেছে । নারীশিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছে, যদিও শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনো নারী-পুরুষের ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে। যেহেতু নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে সেহেতু দেখা যায় নারী এখন বিভিন্নরকম পেশায় নিযুক্ত হয়েছে । কিছুসংখ্যক নারী উচ্চ প্রশাসনিক পদে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। রাজনীতির অঙ্গনেও নারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সামাজিকভাবে বলতে গেলে নারীর চলাচল বেড়েছে। পর্দপ্রথা শিথিল হয়েছে। নারী এখন ব্যক্তিসত্তার বিকাশে সমাজের অনুশাসনের দ্বারা আগের মতো বাধাগ্রস্ত নয় ।
সুলতানা কামাল
নাজমা চৌধুরী
মালেকা বেগম
মাহমুদা ইসলাম
হাসনা বেগম
Title :
রোকেয়া স্মারক বক্তৃতমালা ২০০৬-২০০৯ প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদে : বাংলাদেশের নারী ও রোকেয়া দর্শন