রবীন্দ্রনাথ মহান রোম্যান্টিক, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিকদের একজন, যিনি কবিজীবন শুরু করেছিলেন এক প্রচণ্ড বহিরস্থিতরূপে, স্বপ্ন যার ছিলো স্বদেশ আর বাস্তব বিদেশ। কিন্তু তিনি অনতিবিলম্বে প্রবেশ করেন বাস্তবে, প্রবল আকর্ষণ বোধ করেন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি; এবং সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা ছিলো। তিনি সারাজীবন ভেবেছেন সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ, বাঙালি, হিন্দু, মুসলমান, ইংরেজ, স্বাধীনতা, পরাধীনতা, ঔপনিবেশিকতা, শিক্ষা প্রভৃতি সম্পর্কে; লিখেছেন বিপুল পরিমাণ সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ক প্রবন্ধ। তাঁর প্রবন্ধরাশিতে তাঁর রোম্যান্টিক সত্তাটি প্রকাশিত হয়েছে বারবার,তবে তিনি বাস্তব থেকেও স’রে যান নি; মানুষের কল্যাণকামনায় অনিদ্র থেকেছেন আমৃত্যু। রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তার তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন হুমায়ুন আজাদ এ – বইটিতে। বইটি লিখেছিলেন তিনি শিক্ষার্থী হিশেবে, তাই ত্ত্বাত্তিক ও সমালোচনামূলক আলোচনা করেন নি রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তার; তিনি তুলে ধরেছেন রবীন্দ্র রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তার রূপটি। ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ নয়, স্বরূপ নির্দেশই এ- গ্রন্থের কৃতিত্ব। যারা রবীন্দ্র সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার রূপটি অবিকৃতভাবে জানতে চান, বিভিন্ন ব্যাখ্যা দ্বারা বিভ্রান্ত হ’তে ভান না, তাঁরা সহায়তা পাবেন এ – বইয়ের; এবং তৈরি ক’রে নিতে পারবেন নিজেদের ব্যাখ্যা।
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।