রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসীম। ব্যক্তি, কবি, সংগঠক, প্রশাসক, গীতিকার, সুগায়ক, নাট্যকার, নট, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সমালােচক, চিত্রশিল্পী, বিশ্ব পর্যটক, সমাজ সংস্কারক, স্বাদেশিকতা ও বিশ্বমানবতার পথ প্রদর্শক, আরও কত কি! শুধু সাহিত্য কেন, শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা, জনসেবায় শান্তিনিকেতনশ্রীনিকেতনের বিশ্বজনীনতা প্রভৃতির জন্যেও তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান অন্তত পাঁচটি “নােবেল পাওয়ার যােগ্য। পৃথিবীতে এমন প্রতিভাধর স্রষ্টা আর কেউ নেই। একটা নােবেল প্রাইজ দিয়ে তাঁর প্রতিভার সার্থকতা পরিমাপ করা যায় না। তিনি অনন্য, অদ্বিতীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সমস্ত কিংবদন্তী নােবেলজয়ীদের মধ্যে চির অম্লান, উদ্ভাসিত ধ্রুবতারা। গানে তিনি আজও অপরাজেয় এমন অপূর্ব ও এত বেশি কাব্যসংগীত পৃথিবীতে আর কেউ রচনা করেননি। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তাঁর স্থান অনেক উর্ধ্বে। ছােটগল্পগুলি অসাধারণ, নৃত্যনাট্য, গীতিনাট্যগুলির আবেদন ম্লান হয়নি। যে কবির রচনায় ১৫৮ বছর পরেও নতুন নতুন ভাব, রূপ আবিষ্কার করা যায়, সেই কবিই তাে প্রকৃত সার্থক। কোন ব্যক্তি সারাজীবন তার সাহিত্য সৃষ্টি পড়ে শেষ করতে পারবেন না। বাকি যে সব কৃতিত্ব সেগুলাে বাদ দিলেও কেউ আর কোনাে দিন এমন ব্যক্তি হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন না।
রবীন্দ্রনাথ ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা শুধু নন, তাঁর প্রিয় শিষ্য আনন্দ সমরাকুন শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত তাঁর ভাবধারায় রচনা করেছেন।
সাহিত্যে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি-ধর্ম-রাজনীতি-সমাজনীতি সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা মূল্যায়ন অপরিহার্য। রবীন্দ্রচর্চা ব্যাপকভাবে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হওয়া দরকার। কারণ, তাঁর রচনা ও সৃষ্টিমালা সর্বসাধারণের সম্পদ। তাঁর বিচিত্র সৃষ্টির ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকার আমরা। এই ঐতিহাসিক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বকে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে আগমনীর আবাহনী বার্তার মতাে পৌছে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। রবীন্দ্রনাথের ইতিবৃত্ত তথা বিস্ময়কর প্রতিভাধরের সৃষ্টির ডালি “রবিবিশ্ব” গ্রন্থে সম্পূর্ণ প্রতিফলিত, যা রবীন্দ্র উপাসনার একটি পবিত্র নৈবেদ্য। এই বই প্রকাশনায় বাংলাদেশের ঢাকার শ্রী মহম্মদ আরিফ ইকবাল মহাশয়ের সাহায্য বিশেষ স্মরণীয়। তাঁর সাহায্য ছাড়া এই প্রকাশনা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আমি স্মরণ করি ডাঃ ত্রিপর্না সেন যার অনুপ্রেরণা এই বই লেখাতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া, এই বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা বিদ্যাপ্রকাশ’-এর প্রকাশক মজিবর রহমান খােকা মহাশয়কে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বিশেষভাবে স্মরণ করি।
ডাঃ রণজিৎ সেন
প্রফেসর কর্নেল ডাঃ রণজিৎ সেন একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ শল্য চিকিৎসক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতা ছাড়াও বিদেশে বিশেষ করে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে দীর্ঘদিনের শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ। তাছাড়া। ফরেনসিক বা অপরাধ বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভারত সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও পরামর্শদাতারূপেও বহু বছর নিযুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতা করেছেন গবেষণাতেও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। ১৬টি ডাক্তারি বই ও দুটি ফরেনসিক বই পৃথিবীর খ্যাতনামা প্রকাশক দ্বারা সারা পৃথিবীতে পাঠ্য। তাছাড়া সাহিত্য সম্বন্ধীয় ৫টি বই সর্বজনপ্রিয়। ৪০০টিরও বেশি নানা বিষয়ে প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সমাদৃত হয়েছে। তাছাড়া ৪৭টি ক্যান্সার গবেষণাপত্রও প্রধানত বিদেশী খ্যাতনামা জার্নালে উচপ্রশংসিত। বর্তমানে ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের শ্রদ্ধেয় রাজ্যপালের প্রতিনিধি হয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসীন। তাছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ােগ-সংস্থা, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি, এমপ্লয়িস স্টেট ইনস্যুরেন্স, ইনফরমেশন এন্ড কালচার বিভাগে অধিষ্ঠিত। শুধু তাই নয়, ১৮টি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল সম্মেলনে, ৩৭টি জাতীয় বিজ্ঞান সম্মেলনে তার গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়েছে।