বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিচিত, সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলোর একটি হচ্ছে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। বর্তমান বিশ্বে কেউ তাঁকে মানুক অথবা না মানুক, তাঁর নাম শোনেনি, সাত মহাদেশে এমন লোক খুঁজে পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। আমরা ধন্য, তিনি আমাদের নবীজি, আমাদের নেতা এবং আমরা তাঁর উম্মত।
গোটা বিশ্বজুড়েই কোটি কোটি মুসলমান তাঁর প্রেমে প্রেমিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কোটি কোটি মুসলমানের কয়জন তাঁকে ভালভাবে জানেন? নানান দেশে নানান ভাষায় তাঁর জীবনী গ্রন্থ লেখা হয়েছে যার সংখ্যা লক্ষাধিক, বেশিরভাগ গ্রন্থই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। বিক্রির রেকর্ড অন্তত সেই কথাই বলে। এমন মুসলিম বাড়ি খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে পবিত্র কুরআন শরীফ আছে, কিন্তু নবীজির (সঃ) জীবনীগ্রন্থ নাই। তারপরেও কয়জন মুসলমান আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেন তাঁরা তাঁদের নেতা, প্রানপ্রিয় রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জানেন? তাঁর জন্ম কতসালে, কত বছর বয়সে তিনি নবী হয়েছেন, কত সালে তাঁর মৃত্যু, তাঁর পিতা মাতা দাদার নাম ইত্যাদি তথ্যের কথা আমি বলছি না।
আমি বলছি তাঁকে ঘিরে যেসব কুতর্ক তোলার চেষ্টা করা হয়, যেমন নবী হয়েও তিনি কেন যুদ্ধ করলেন, কেন "পালক পুত্রের" সাবেক স্ত্রীর সাথে তাঁর বিয়ে হলো, কেন হজরত আয়েশার (রাঃ) বিয়ের বয়স এত কম ছিল ইত্যাদি থেকে শুরু করে ইসলামের আরও কিছু বিষয় যেমন পুরুষের চার বিয়ের অনুমতি, ইসলামে দাস প্রথা, দাসী সম্ভোগের অধিকার, জিহাদ ইত্যাদি ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়, যা আমাদের দেশে মোটামুটি কোন সীরাত গ্রন্থেই ব্যাখ্যা সহ আলোচনা হয়না, এবং যা সাধারণ মুমিন মুসলমান আদবের সাথে ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যান (যা ধ্বংসাত্মক একটি স্বভাব); আমি এসবের কথাই বলছি। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে আমরা চোখ কান বন্ধ করে রাখতে চাইলেও সেটা করা সম্ভব হয় না। আমাদের ভাই বোন, আমাদের সন্তানেরাই তাঁদের বন্ধুবান্ধব কিংবা শত্রুদের কাছ থেকে আমাদের নবী, আমাদের ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে সত্য মিথ্যার সংমিশ্রনে এমন সব তথ্য জানতে পারে যা তাঁদের ঈমানের শেকড় ধরে নাড়া দেয়। আপনি হয়তো ঈমানের জোরে টিকে থাকতে পারবেন, কিন্তু আপনার সন্তানের ঈমান একই পরিমান দৃঢ় হবে, এর নিশ্চয়তা কি? সে যখন তার বন্ধু অথবা দেশের বিখ্যাত কোন লেখকের অর্ধ সত্য লেখা পড়ে জানবে জয়নাবের (রাঃ) ঘটনা, কিংবা বনু কুরাইযার ব্যাপারে, তাঁর ঈমান নষ্ট হয়ে যেতেই পারে। তখন কাকে দোষ দিবেন?
এ থেকে পরিত্রানের উপায় কেবল একটিই, সঠিক ও সত্য জ্ঞান। ঈমানের জোর তখনই জোরালো হয় যখন তাতে জ্ঞানের বল যুক্ত হয়। আমাদের নবীজির জীবনী বলার পাশাপাশি প্রতিটা ঘটনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আমাদের এই যুগে কিভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারবো, একই সাথে কিছু বিষয় যা আমাদের ঈমানের ভিত্তিতে আঘাত হানার চেষ্টা করে, সেসব বিষয়ের উপর আলোকপাত করার উদ্দেশ্যেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আল্লাহ আমার সহায় হন! আমিন!