কিছু কিছু ভ্রমণ-কাহিনি হয় এমন, যেগুলো পড়লে বোঝা যায়না সেগুলো কোনও ব্যক্তি বিশেষের ভ্রমণের কথা নাকি সে স্থান সংক্রান্ত কোনও জ্ঞানকোষ থেকে তুলে দেয়া অংশ বিশেষ। কোনটিতে আবার লেখকের ভ্রমণ-কৃত স্থান, তার পরিবেশ, মানুষ, সেখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য- এসবের চাইতে বেশি প্রাধান্য পায় লেখকের নিজের কথা। আরেক শ্রেণির ভ্রমণকাহিনিতে ছবির আধিক্যে প্রাণ হারায় মূল লেখা। সঞ্জয় দের লেখা ভ্রমণকাহিনি এই তিনটি বিষয় থেকেই মুক্ত। লেখকের লেখাগুলো নিছক ভ্রমণকাহিনি নয়; তা ছুঁয়ে যায় সমসাময়িক ঘটনাবলী, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর শিল্পকলা। আর এর সাথে পরিমিত পর্যায়ে সমন্বয় ঘটে লেখকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণলব্ধ অভিমতের। মার্কিন-প্রবাসী এই লেখক নিছক শখের বশে ঘুরে বেড়িয়েছেন পূর্ব ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক বেশ কয়েকটি দেশে। কৈশোর থেকে নিজের ভাবনার জগতে এই দেশগুলো সম্পর্কে লুকিয়ে থাকা কৌতূহলই লেখককে বাধ্য করেছে ইউরোপের এ অঞ্চল পরিভ্রমণে। বাল্টিক থেকে বলকান পর্যন্ত তার সেই ভ্রমণের ইতিবৃত্তে লেখক তুলে আনার চেষ্টা করেছেন সমাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর এই দেশগুলোর সমসাময়িক কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দৃশ্যকল্প। এসবের সাথে সাথে এই দেশগুলোর পূর্বকালের প্রাসঙ্গিক ইতিহাস, নির্বাক স্থাপত্য আর সবাক জনগোষ্ঠীও সাথী হয়েছে লেখকের লেখনীর। এই বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকা গল্পগুলোর কাব্যময়তা আর গতিশীলতা কখনও পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে লাটভিয়ার রাজধানী রিগার লুথেরান গির্জার সম্মুখের টিউলিপের বাগানে আবার কখনও বসনিয়ার সারায়েভোতে বলকান যুদ্ধ শেষে নতুন করে জীবন সংগ্রামে উদ্দীপ্ত যুবক মুগদিবের কাছে।