‘হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত’ কবি রাকিবুল এহছান মিনারের চতুর্থ ‘হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত’ কবি রাকিবুল এহছান মিনারের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। এ পাণ্ডুলিপিটির প্রায় সবগুলো কবিতা আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে।
পড়ে মনে হয়েছে, কবি নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে এবং নিজের পরিচর্চা করছে নিয়মিতই। কবিরা সমাজকে তার কবিতার আয়না দিয়ে খোঁজেন। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দেখে নেন জীবন জগতের রহস্যকে।
‘হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত’ বইটিতে কবি সমাজের বাস্তবতাগুলোকে খুব চমৎকারভাবে কাব্যিক ভাষায় তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সমাজকে পরিবর্তনের জন্য যে মাধ্যমগুলো প্রয়োজন, তার মধ্য থেকে সংস্কৃতি সবসময়ই একটি বড়ো এবং শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
আর সে সংস্কৃতির অন্যতম দুটি অঙ্গ হলো গান ও কবিতা। এদুটিকে সংস্কৃতির প্রাণও বলা চলে। যার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানো সম্ভব।
সংস্কৃতির শক্তিশালী এই দুটো শাখায়ই কবি মিনার সমানভাবে অবদান রেখে চলছে।
মাঝে মাঝে আমি কবি নজরুল ইসলামকে নিয়ে ভাবী, তিনি জীবনে যতটুকু সময় পেয়েছেন আর যত লেখা লিখেছেন, তা মহান রবের নিতান্ত রহমত এবং করুণা ছাড়া অসম্ভব।
ঠিক একইভাবে মিনারকেও আমি বলি, শুধুমাত্র একটি লাইনেই এত বড়ো গল্পের মূলভাব লিখে ফেলা কিংবা শুধু একটি গানে অথবা
একটি কবিতায় পুরো বইয়ের সারমর্ম লিখে ফেলা—এ কেবল মহান রবের দয়া থাকলেই সম্ভব।
সচারচর এমন প্রতিভাগুলো খুব কম সময়ের ব্যবধানে দেখা যায় না।
মিনার সবসময়ই প্রতিশ্রুতিশীল ছিল, বরাবরের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তার গান, কবিতায় লুকিয়ে থাকে একজন প্রকৃত কবির ব্যাকুলতা। লুকিয়ে থাকে স্রষ্টার প্রতি সীমাহীন আনুগত্য আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কঠিন অনুভূতি।
আমি খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রাকিবুল এহছান মিনার—কবি নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ, গোলাম মোহাম্মাদ এবং কবি মতিউর রহমান মল্লিকের যোগ্য উত্তরসূরী হবে।
সময়ের ব্যবধানে মিনারের নামও একজন কলমযোদ্ধা হিসেবে ইতিহাসে বেঁচে থাকবে বহু কাল, বহু বছর, ইন শা আল্লাহ।
আশা করছি, ‘হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত’ বইটির প্রতিটি কবিতাই পাঠকের হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে সক্ষম হবে।
কবি ও কাব্যগ্রন্থের সফলতার জন্য অফুরান দোয়া ও শুভ কামনা রইল।
ইকবাল হুসাইন জীবন
নাশীদ আর্টিস্ট :::
(একটি কবিতা থেকে কিছু অংশ)
‘আমি কবি’ যেখানে কোনো ফায়ারসার্ভিস নেই
সেখানে প্রায়শই আগুন লাগে, ভালোবাসার।
নেভানোর কেউ নেই
তাই জ্বলতে জ্বলতে একসময়
নিজ থেকেই নিভে যায় সে আগুন,
পুড়ে আঙ্গার করে দিয়ে কামনার হেরেম।
আমি কবি নই;
তবুও মাঝে মাঝে
প্রেমে পড়ে যাই কবিতার।
শুভ্র পাতায় টেনে দিয়ে
কলমের দাগ,
আমি তাকে আবৃত্তি করি
হৃদয়ের বারান্দায় মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে
লজ্জায় লাল হয়
জোছনার চাঁদ,
নরম মেঘের আস্তরণে লুকিয়ে
পরক্ষণে উঁকি দিয়ে দেখে যায়
মাটির রাজকুমার।
আমি কবিতাও নই;
তবুও মাঝে মাঝে ঝলসে যাই
বিরহের আগুনে, কয়লার মতো।
সাদা পাতা পড়ে রয়
সফেদ কাফনের মতো
খরায় ফেটে যায়
কলমের বুক,
অশ্রুর নদী শুকায় প্রবল ভাটায়,
চাঁদহীন আকাশ করে
অমাবস্যার উৎসব অন্ধকারে মিশে যায়
আমার কল্পিত রাজপ্রাসাদ।
হয়তো আমি ঘুমিয়ে রবো
কোনো সবুজ উদ্যানে,
যার পাদদেশ দিয়ে বয়ে যাবে
দুধের ঝরনাধারা,
পাপের পাহাড় ধুলোয়
লুটাবেন অসীম ক্ষমায়,
করুণাময়।
হয়তো আমি আবার কবি হব
জান্নাতের কোনো জলসায়,
পবিত্র সমাবেশে সেদিন
আবার আবৃত্তি করব
মৃত্যুর ঠিক আগে লিখে যাওয়া
সে কবিতা,
যার শেষ লাইন ছিল—
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’,
আর তোমরা সবাই বলে উঠবে—
‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’।
রাকিবুল এহছান মিনার
ছড়াকার রাকিবুল এহছান মিনার-এর জন্ম ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই ফেনী জেলার দাগনভূইয়া উপজেলার ৮ নং জায়লস্কর ইউনিয়নের পূর্ব রামচন্দ্রপুর গ্রামের ভূইয়া বাড়ীর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম সমৃদ্ধ জেলা ফেনী। কবি নবীনচন্দ্র সেনের জেলা হিসেবে পরিচিত এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ্ কায়সার, সিরাজুল হক খান, সেলিনা পারভিন, জহির রায়হান ও নাট্যকার সেলিম আল দীন-সহ অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব। . সাহিত্য সংস্কৃতির এই উর্বর ভূমিতেই গত শতাব্দীর বিদায়ের ক্ষণে এসে জন্ম হয় বর্তমান সময়ের উদীয়মান তরুণ কবি ও গীতিকার রাকিবুল এহছান মিনারের। আর পাঁচজন সাধারণ ছেলের মতোই আবাহমান গ্রাম বাংলায় জন্মগ্রহণ করা ও বেড়ে ওঠা এ ছেলেটির মা-বাবাও হয়তো ভাবতে পারেননি, তারা কেমন একজন আলোকিত মানুষের জন্ম দিয়েছেন ও বেড়ে তুলেছেন। তারা কি জানতেন? একদিন তাদের জন্ম দেওয়া সেই ছোট্ট শিশুটি বড়ো হয়ে তার কাব্য প্রতিভায় আলোকিত করবে দেশ ও জাতি। তার লেখনীতে আলোর পথ খুঁজে পাবে পথহারা মানুষেরা। নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখতে পাবে দুঃস্থ অসহায় ও মাজলুম মানুষেরা। . অতি যতনে বাবা-মা যার নাম রেখেছিলেন রাকিবুল এহছান মিনার। আজ যেন সেই নামেরই প্রতিফলন তার ব্যক্তিচরিত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘ইয়া রাকিবু’ থেকে নেওয়া রাকিব নামটি। পিতা মজিবল হক পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ও মাতা রাশেদা আক্তার লিপি পেশায় গৃহিণী। ছোট বেলা থেকেই ছন্দের প্রতি এক গভীর টান অনুভব করেন ছড়াকার রাকিবুল এহছান মিনার। একমাত্র চাচা জামাল উদ্দিন শিশুদের সাথে মজার ছলেই ছন্দে ছন্দে কথা বলতেন, তাই কবির ছন্দ ও অন্ত্যমিলের প্রাথমিক শিক্ষক তার চাচা-ই। তাছাড়া কবি’র পিতা ও চাচা দু’জনই সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী এবং তারা উভয়ই অনেক কবিতা লিখেছেন।
পড়ালেখায় তিনি সিলোনিয়া হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে মাধ্যমিক ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ভালো ফলাফল অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১২ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে যথাক্রমে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি জীবিকার তাগিদে প্রবাসে অবস্থান করছেন। ‘নিজকে গড়ো’ তার এ প্রাথমিক বইটি তিনি প্রবাসে বসেই লিখেছেন।
মানবিক আদর্শে উজ্জ্বীবিত ছড়াকার রাকিবুল এহছান মিনার মনে প্রাণে একজন মানবতার কর্মী। তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন বঞ্চিত অসহায় মানুষের কল্যাণে। বিশেষ করে পথশিশুদের জন্য তিনি সুদূর প্রবাস থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘পথের ফুল ফাউন্ডেশন’। ফাউন্ডেশনটি মানবতার সেবায় সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে। তিনি বিশ্বাস করেন মানুষকে ভালোবাসার মাঝেই প্রকৃত সুখ বিদ্যমান এবং গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করার মাঝে যে তৃপ্তি রয়েছে তা জগতের অন্যকিছুতে নেই।
দেশব্যাপী মানবতার কল্যাণে কাজ করা ‘পথের ফুল ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা এ কবি নিয়মিত সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে নিজের এহছান নামের প্রতি যেমন সুবিচার করে যাচ্ছেন, তেমনই বর্তমান বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে সে সাহিত্যের উচ্চ মিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। . অপসংস্কৃতি ও পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে আমাদের দেশের ছাত্র যুবসমাজ যখন অশ্লীলতা বেহায়াপনা ও মাদকতার দিকে ক্রমবর্ধমানহারে ঝুঁকে যাচ্ছে, তখন কবি রাকিবুল এহছান মিনার নিয়মিত তার গান কবিতার মাধ্যমে তাদের আলোর পথে আহ্বান করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র নিজের কাব্য রচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে লেখালিখিতে আগ্রহী তরুণদেরকে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কাব্য রচনায় নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। . ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন প্রবাসী। নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর শুধু কলমের মাঝেই নয়, নিজের কর্মক্ষেত্রেও রেখেছেন। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের একটি স্বনামধন্য কোম্পানীতে ‘পরিমাণ পরিমাপক’ পেশায় সুনামের সহিত নিয়জিত আছেন। . সাহিত্যকর্মে নিয়মিত অবদান রেখে যাওয়া এই তরুণ কবির ইতোমধ্যে কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কাব্যগ্রন্থগুলো হলো— নিজকে গড়ো, চেহারায় মানুষ, ছন্দে গাঁথা বারুদ, হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত ও প্রিয়তমা—তোমাকে যেভাবে চাই।