বাস্তব জগতের উপযুক্ত করে স্কুল কি শিশুদের প্রস্তুত করে? আমার বাবা-মা বলতেন, “পরিশ্রম করে পড়াশােনা করাে এবং ভালাে ফল করাে। তাহলে তুমি একটা মােটা মাইনের চাকরি পাবে, বিশেষ সুযােগ-সুবিধা পাবে। তাদের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল আমার দিদিকে এবং আমাকে কলেজে পড়ার সুযােগ দেওয়া যাতে আমরা জীবনে সফল হওয়ার সুযােগ পাই। শেষে, যখন আমি ১৯৭৬-এ ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাকাউন্টিং-এ ক্লাসের প্রায় শীর্ষস্থান পেয়ে অনার্স গ্রাজুয়েট হলাম, আমার বাবা-মার উদ্দেশ্য পূর্ণ হলাে। এটা তাদের জীবনের সবচেয়ে সেরা সাফল্য। ‘মাস্টার প্লান' অনুযায়ী আটটি সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্মের একটিতে আমি চাকরি পেলাম এবং আমি সানন্দে সুদীর্ঘ কর্মজীবনের অবসর নেওয়ার প্রত্যাশায় থাকলাম যথাসময়ের আগেই।
আমার স্বামী মাইকেলও ছিলেন একেই পথের পথিক। আমরা দুজনেই এসেছিলাম পরিমিত রােজগারের কঠোর পরিশ্রমী পরিবার থেকে। কাজের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মূল্যবােধে বিশ্বাসী। মাইকেল অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েট পাশ করেছিল। বরং সে দুবার ডিগ্রি নিয়েছিল! একবার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, একবার আইন স্কুল থেকে। সে ওয়াশিংটন ডি. সি-র পেটেন্ট আইনে” বিশেষজ্ঞ। শীঘ্রই তাকে চাকরিতে নিযুক্ত করেছিল একটি বিখ্যাত ল-ফার্ম। তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল মনে হয়েছিল কারণ তার কর্মজীবনে উন্নতির পথ সুনির্দিষ্ট ছিল এবং তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণের সুনিশ্চয়তা ছিল।
যদিও কর্মজীবনে আমরা সফল হয়েছিলাম, কিন্তু যেমন আশা করেছিলাম ঠিক তা হয়নি। সঠিক কারণেই আমরা বহুবার চাকরি বদল করেছি তাই আমরা কোনাে পেনশনের সুবিধা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের অবসর গ্রহণের পুঁজি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত জোগানের সাহায্যেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাইকেল এবং আমার বিবাহিত জীবন চমক্কার এবং আমাদের তিনটি সুন্দর সন্তান আছে। যখন আমি এই বইটা লিখছি, তখন দুজনে কলেজে পড়ে এবং একজন সবে হাইস্কুল শুরু করেছে। আমরা প্রচুর টাকা খরচ করেছি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য যাতে তারা সব থেকে ভালাে শিক্ষা পায় নিশ্চিতভাবে!
১৯৯৬ সালে একদিন, আমার সন্তানদের মধ্যে একজন, স্কুল সম্পর্কে মােহভঙ্গ হয়ে বাড়ি এলাে। তার একঘেয়েমি আর ক্লান্তি এসে গিয়েছিল পড়াশােনায়। তার প্রতিবাদী যুক্তি-ব্যবহারিক জীবনে যেসব বিষয়গুলাে দরকার হয় না, কী দরকার সেসব পড়ে? বাস্তব জীবনে তার কতটাই বা কাজে আসে?
রবার্ট তরু কিয়োসাকি
হাওয়াইয়ে জন্ম ও বেড়ে উঠা রবার্ট জাপানী। আমেরিকানদের চতুর্থ বংশধর। তিনি প্রখ্যাত শিক্ষক পরিবারের সন্তান। হাইস্কুলের পর রবার্ট নিউইয়র্কে পড়াশুনা করে এবং গ্রাজুয়েশন শেষে ইউ, এস, মেরিন কর্পসে যােগ দেয় এবং একজন অফিসার ও হেলিকপ্টার গানশিপের পাইলট হিসেবে ভিয়েতনাম চলে যায়। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর রবার্টের ব্যবসা শুরু হয়। ১৯৭৭ এ তিনি একটি কোম্পানী তৈরি করেন যেটি মার্কেটে প্রথম নাইলন ও ভেলকো ‘সালফার ওয়ালেট মার্কেটে নিয়ে আসে, যা মাল্টি মিলিয়ন ডলারের পণ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। তিনি ও তাঁর পণ্য নিয়ে রানার’স ওয়ার্ল্ড, জেন্টেলম্যান’স কোয়াটারলি, সাকসেস ম্যাগাজিন, নিউজউইক ও এমনকি প্লেবয়’ এ ফিচার ছাপানাে হয়। বাণিজ্যিক বিশ্ব ছেড়ে ১৯৮৫'_ এ তিনি এক আন্তর্জাতিক শিক্ষা কোম্পানীর সহ-স্থাপন করলেন, যেটি সাতটি দেশে দশ হাজারেরও বেশি গ্রাজুয়েটদের ব্যবসা ও বিনিয়ােগ শিক্ষা দিত। ৪৭ বছর বয়সে রিটায়ার করার পর রবার্ট তা-ই করলেন, যেটি সবচেয়ে বেশি উপভােগ করেন। বিনিয়ােগ থাকা ও না-থাকার মধ্যকার পার্থক্যের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি বাের্ড গেইম ক্যাশফ্লো চালু করেন, যেটি টাকার খেলা শেখায়। যদিও রবার্টের ব্যবসা হল রিয়েল এস্টেট ও ছােট ক্যাপ কোম্পানীর উন্নয়ন, তার সত্যিকার ভালবাসা ও মােহল শিক্ষকতা। তিনি বিশিষ্ট অগ মানডিনাে, জিগ জাগলায় ও অ্যান্থনি রবিনসদের সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত বক্তা ও গ্রন্থাকার অ্যান্থনি রবিনস রবার্টের কাজ সম্পর্কে বলেছেন, “শিক্ষার ক্ষেত্রে রবার্ট কিয়ােসাকির কাজ শক্তিশালী, গভীর ও জীবন পরিবর্তনকারী।