রিভাইভ ইয়োর হার্ট বইটির মূল লেখক নোমান আলী খান। বাংলা অনুবাদটি হাতে পেয়েই পড়ে ফেললাম। সহজ সাবলীল ভাষার একটি অনুবাদ যা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আখিরাত নিয়ে লেখা অংশগুলো আমার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখকের ভাবনা চিন্তাগুলো বেশ যৌক্তিক এবং কার্যকর মনে হয়েছে। সময়োপযোগী একটি ইসলামী বই যা পড়ে সবার ভালো লাগবে বলেই আমি মনে করি।
আধুনিক যুগের মানুষেরা কিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে হৃদয়ের কথা তুলে ধরে? কিভাবে আমরা একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সমাজ গড়ে তুলতে পারি? আজকের দিনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ গুলো কিভাবে আমরা সামলিয়ে নিতে পারি? এসব প্রশ্ন এবং তার উত্তর খুঁজে পাবো এই সংকলিত গ্রন্থে ইনশাল্লাহ। ঝঞ্জা - বিক্ষুব্ধ এই সময়ে আমাদের করণীয় খুঁজে ফিরব এখানে। হৃদয়ের একান্ত গোপনে লুকানো জিজ্ঞাসাকে তৃপ্ত করতে নজর রাখুন বইটির পাতায়৷ উজ্জীবিত করুন অন্তরকে, পরিকল্পনা করুন এক সুন্দর বিশ্ব গড়ার।
বইঃরিভাইভ ইয়োর হার্ট লেখকঃউস্তাদ নোমান আলী খান অনুবাদকঃমারদিয়া মমতাজ রিভিউ লিখেছেনঃ রবিউল ইসলাম আমরা এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি। প্রতিযোগিতার নামে ব্যক্তিস্বার্থের দাস হয়ে পড়ছি। আমাদের অন্তর মরে যাচ্ছে। আত্মার বন্ধন ধীরে ধীরে ছিঁড়ে যাচ্ছে। নফসের গোলামী করতে গিয়ে নিজেদের মতো একটা চিন্তা-দুনিয়া তৈরি করছি। যেখানে আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনে ওকালতি করি, আর অন্যের ব্যাপারে বিচারকের ভূমিকায় পৌঁছে যাই। ন্যায়-অন্যায়ের একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করতে পারি। পার্থিব জীবনের বিনিময়ে আখিরাতকে খুব অল্প দামে বেঁচে দিতে পারি। এই দুনিয়ায় আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চাই, অনেক কিছু পেতে চাই। অথচ আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এক আল্লাহর সীমারেখার মধ্যেই অবস্থান করব। কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে মহান প্রভুর উপর আস্থা রাখব। ওস্তাদ নোমান আলী খান মুসলিম হৃদয়ের এসব অব্যক্ত কথামালা প্রকাশ করেছেন অত্যন্ত সাবলীল ভাষায়। বলছিলাম ওস্তাদ নোমান আলী খান এর বাছাইকৃত বক্তব্যের সংকলনে রচিত "রিভাইভ ইয়োর হার্ট" বইয়ের প্রকাশকের কথা। সত্যিই একটি অসাধারণ বই "রিভাইভ ইউর হার্ট"। বইটি যখন পড়ছিলাম, তখন শুধু বারবার মনে হচ্ছিল যে, উস্তাদ নোমান আলী খান আমার সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, এটা আপনার ক্ষেত্রেও হতে পারে। প্রতিটি পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি এবং আমার হৃদয় নাড়া দিয়েছে। আসলে যদি আমরা এই একটি বইয়ের শিক্ষা গ্রহণ করে বাস্তব জীবনে চলতে পারি, তাহলে এটিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে বলে আমি মনে করি। যাহোক বইটিকে প্রধানত পাঁচটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। - দুআ, - একটি সক্রিয় মুসলিম কমিউনিটি, - আমরা কীভাবে উপার্জন করি, - কিছু সমসাময়িক বিষয় এবং - আখিরাত : জীবনযাপনের মূল লক্ষ্য। এ বিষয়গুলো সংক্ষিপ্ত, অথচ অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় উস্তাদ নোমান আলী খান হৃদয়গ্রাহী করে তুলে ধরেছেন। বইয়ের একেবারেই প্রথম পর্বে আল্লাহর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উস্তাদ নোমান আলী খান দুআর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। "বিপন্ন সময়ের দোয়া" এই শিরোনামে তিনি মানুষের এবং আল্লাহর সম্পর্ক কী হবে, কীভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর হবে, আল্লাহর কাছে কীভাবে চাইলে পাওয়া যাবে, এ বিষয়ে যথেষ্ট মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেছেন। বিপন্ন সময়ের দুআ হিসেবে উদাহরণ টেনেছেন হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম-এর। হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম দেশ থেকে ফেরারি জীবন গ্রহণ করে মরুভূমিতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তার খাবার প্রয়োজন,আশ্রয় প্রয়োজন, সুরক্ষা প্রয়োজন, জীবিকা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি সেসব এর জন্য আল্লাহর কাছে কীভাবে চাইলেন এবং আল্লাহ কীভাবে ব্যবস্থা করে দিলেন, তার সুন্দর বর্ণনা এখানে পাওয়া যাবে; যা সত্যি অতুলনীয়। এরপরে কিছুদুর এসে লেখক "দুআ এবং হতাশা" শিরোনামে কিছু বক্তব্য প্রদান করেছেন। যেখানে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন , মানুষ দুআ করে না পেয়ে কেন হতাশ হয়? আবার হতাশ না হলে মহান প্রভু কীভাবে প্রতিদান দিবেন, তা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে সুন্দরভাবে। এরপর হযরত জাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ দিয়ে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যা না পড়লে বুঝতে পারবেন না। হযরত যাকারিয়া আঃ সালামের দুআর পদ্ধতি কী ছিল, সে সম্পর্কেও এখানে বলা হয়েছে। জাকারিয়া আঃ বলেছেন "হে আল্লাহ আপনার কাছে চেয়ে আমি কখনো দুঃখিত হইনি, মনঃক্ষুন্ন হইনি, এমনকী কখনো হতাশ হইনি।’’ এভাবে হযরত জাকারিয়া আঃ প্রার্থনা করেছেন। আর তার কবুলিয়াতের বিষয়টিও সুন্দরভাবে লেখক বর্ণনা করেছেন। এরপরে দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসে একটি সক্রিয় মুসলিম কমিউনিটি গড়ে তোলার ব্যাপারে বেশ কয়েকটা পয়েন্টে বাস্তব এবং বিজ্ঞানসম্মত কথা উপস্থাপন করেছেন। যা সত্যিই অসাধারণ। "সমালোচনা" এই শিরোনামে বাস্তব কিছু কথা তুলে ধরেছেন। সমালোচনা আমরা কীভাবে করি? কার সমালোচনা করি? কী ধরনের করা দরকার আর? সমালোচনাটা কী? এগুলো বিষয় অত্যন্ত সুন্দর এবং খোলামেলা ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মুসলিম সমাজে বা আমাদের মধ্যে হয়তো এমন লোক পাওয়া যাবে যে, কেউ কখনো কোনো কাজ ভুল করে বসেছে। অথবা কিছু ভুল লিখেছে, আমরা সাথে সাথে তাকে চিরদিনের জন্য অপরাধী ভেবে বসি। এটা ভীষণ অন্যায়। এ বিষয়টি এখানে আরও স্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর একটি অসাধারণ উদাহরণ টেনে এটা শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরে "অনুমান করা" এই শিরোনামে উস্তাদ নোমান আলী খান সুন্দর যুক্তিসঙ্গত এবং সাবলীল ভাষায় কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন; যা প্রত্যেকটি পাঠকের হৃদয়কে মোহিত করবে। আমরা অনুমান করে ফেলি যে অমুক ব্যক্তি খারাপ, উমুক এটা করেছে, না করলে কী হতো? আবার আমরা কোনো ব্যক্তির আলোচনা আসলেই কল্পনার রাজ্যে তার একটা চিত্র দাঁড় করে ফেলি। এই বিষয়টি এখানে নোমান আলী খান সুন্দরভাবে উপস্থাপন এবং এর সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা হুজুরাতের মধ্যে ধারণা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ, বেশি বেশি ধারণা পাপের শামিল। এ বিষয়গুলো উস্তাদ নোমান আলী খান সুন্দরভাবে টেনে এখানে তার বক্তব্য শেষ করার চেষ্টা করেছেন। এরপরের যে বিষয়টিতে তিনি কথা বলেছেন সে বিষয়টি "নেতৃত্ব"। একটি দেশ, একটি সমাজ, একটি পরিবার, একটি কোম্পানি, একটি সংগঠন পরিচালিত হয় যোগ্য নেতৃত্বের উপর। নেতৃত্ব যেমন হবে সেই দেশ, কোম্পানি বা সংগঠনগুলো ঠিক সেভাবেই পরিচালিত হবে। নেতার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মী বাহিনী গড়ে উঠবে। নেতার ভাব এবং আচরণ কেমন হওয়া দরকার- তা নোমান আলী খান বিশেষভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন। নোমান আলী খান ইসলামের ইতিহাসের ওহুদ যুদ্ধের উদাহরণ টেনে কয়েকজন তীরন্দাজের সামান্য একটি ভুলের কারণে যে বিপর্যয় ঘটেছিল, সে বিষয়টি এখানে তুলে ধরেছেন এবং সে বিষয়ের প্রতি নেতার মনোভাব কেমন হয়েছিল, সেটিও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে অত্যন্ত সবলীল ভাষায়। প্রকৃত নেতার বৈশিষ্ট্য তার কর্মীবাহিনীর উপর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য তাদের সাথে সর্বদা পরামর্শ এবং তাদের জন্য দুআ করার বিষয় নিয়ে এই অংশটুকু শেষ করা হয়েছে, যা আপনি পড়লে সত্যি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। এরপরে তৃতীয় অধ্যায়ে এসে উস্তাদ নোমান আলী খান আমাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুন্দর এবং যৌক্তিক উদাহরণের মাধ্যমে বেশ কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। অর্থ উপার্জনের বিষয়ে মনোভাব কেমন হওয়া দরকার? এবং কেমন ভাবে আমরা চলছি? ইসলামের পন্থা কী? এ সম্পর্কে নোমান আলী খান বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ টেনে লেনদেনের বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর রূপে উপস্থাপন এবং সমাধান দিয়ে তৃতীয় অধ্যায়টি শেষ করেছেন। এরপরে চতুর্থ অধ্যায়ে এসে কিছু সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কন্যা সন্তান হলে আমাদের সমাজে অনেকের মুখ কালো হয়ে যায়। কিন্তু কন্যা সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নেয়ামত। কন্যা সন্তানের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যাবে তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলে। এ ধরনের অসংখ্য হাদীসে প্রমাণ আছে এ বিষয়গুলো যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কথার মারপ্যাচে অপরাধীদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। নোমান আলী খান এ বিষয়টি বলতে চেয়েছেন এখানে। অপরাধী অপরাধীই। সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক। যেই হোক না কেন, অপরাধীকে অপরাধের শাস্তি পেতেই হবে। এরপরে বাদ্যযন্ত্র শোনার বিপদের কথা বাদ্যযন্ত্র গান-বাজনা পাপ, এবং কত বড়ো অন্যায় সে বিষয়ে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন। এরই মাধ্যমে চতুর্থ অধ্যায় শেষ হয়েছে। এরপরে বইয়ের পঞ্চম অধ্যায় এসে আখিরাত "যাপিত জীবনের মূল লক্ষ্য" এবং জীবন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা অনেক সময় ছোটোখাটো বিষয়কে গুরুত্ব দিই না। এগুলোকে পাপ মনে করি না। আবার অনেক সময় ছোটোখাটো বিষয়কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বড়ো বড়ো শরিয়তের বিধানগুলো লংঘন করে ফেলি। এ বিষয়গুলো এখানে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা অধ্যয়ন করলে সত্যিই আপনাকে ভালো লাগবে। এরপরে আখিরাত নিয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত কথা বলে বইটি শেষ করা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে আমি আপনাকে বলব যে, বইটি সংগ্রহ করে পড়ুন; কেবল তাহলেই এর কারিশমা বুঝতে পারবেন। বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।