ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাসা থেকে বের হয়েই কাঁদতে থাকে রাতুল। কারণ মারাত্নক একটা অসুখ আছে তার-দু-তিন ঘন্টা পর পর সব কিছু ভুলে যায় সে। রাস্তায় তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় সায়ন্তের সঙ্গে। ছেলের বয়সী রাতুলকে রেখে চলে যেতে পারেন না তিনি, দায়িত্ব হিসেবে তার বাসা খুঁজতে থাকেন তাকে নিয়ে। রাতুলের কথা মতো চিড়িয়াখানায় যান, শিশু পার্কে যান, যাদুঘরে যান -কোথাও বাসা খুঁজে পাওয়া যায় না রাতুলের। এরই মধ্যে মারামারি কপাল ফাটিয়ে ফেলে সে।
মারাত্নক একটা বিপদে পড়ে যায় মিমনির বাবা সাদাত। রাস্তায় একট মৃত মানুষ পেয়ে থানায় নিয়ে আসেন তিনি। মৃতের পকেটে পাওয়া মোবাইল থেকে ফোন করেন তিনি ওই মৃত মানুষটার একজনকে। তিনি আসার পর ঝামেলা আরো বেড়ে যায়, ভীষণ ঝামেলা! কিন্তু মিমনি এসবের কিছুই বুঝতে চায় না, সে আছে অংক নিয়ে, কঠিন কঠিন সব অংক। কারণ দুদিন পর গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দেবে সে! মেয়ে টুনিকে নিয়ে একটা ব্যাক ক্যাবে করে যাচ্ছেন মিথিলা, টুনির বাবার নাকি কি হয়েছে! কিন্তু টুনি আছে প্রশ্ন নিয়ে , একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকে সে। মিথিলার ছেলে ইফতি স্কুল থেকে বাসায় ফিরে, বাসা থেকে বের হয়ে যায় আবার । অথচ মা ফোন করলে মাকে বলে বাসায়েই আছে সে। দুষ্টুমিতে কেটে যায় তার সারাদিন।
কিন্তু অবশেষে জানা যায় আসল রহস্য! অদ্ভুত মজার রহস্য, ভীষণ আনন্দেরও। রাতুল, মিমনি, টুনির দেখা হয়ে যায় এক সঙ্গে, একই স্থানে। ইফতি তখন অন্য এক জায়গায়, অন্য ভাবে!
সুমন্ত আসলাম
আজন্ম লালিত স্বপ্নকে যে সার্থক করে তুলতে পারে, সে-ই সত্যিকারের ভাগ্যবান। আমরা বন্ধুরা তাই সুমন্তকে সেসব হাতে গােনা ভাগ্যবানদের একজন বলে মানি, গর্বিত হই সুমন্তকে নিয়ে; হিংসায়ও পুড়ি কখনাে কখনাে । কারণ একটাই—লেখালেখির স্বপ্নটাকে বিফলে যেতে দেয়নি সুমন্ত আসলাম । বরং শখের লেখালেখির সঙ্গে সখ্য গড়ে সে এখন আদ্যোপান্ত একজন পাঠকপ্রিয় লেখক । ২০০১ সালে ‘স্বপ্নবেড়ি’তে গল্প লেখায় যে মেধার স্বাক্ষর সে রেখেছিল, তা উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমানভাবে । বন্ধু বলে সমালােচনার কাচি-ছুরির হাত থেকে রেহাই মেলে না। লেখক সুমন্তর কিন্তু সব কিছুর শেষে প্রতিবারই হার মানতে হয়। আমাদের, মুগ্ধ হতে হয় তার লেখায় । অপেক্ষায় থাকতে হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পের, কিংবা অন্য কোনাে লেখার। কিংবা আসন্ন বইমেলার—কখন প্রকাশিত হবে সুমন্তর নতুন বই। দৃপ্ত সাহসী ভঙ্গি, চিবুকের সজীব ঔদ্ধত্য দেখে কেউ কেউ অহঙ্কারী বলে ভুল ভাবে সুমন্তকে । কিন্তু আমরা জানি, ভেতরের মানুষটা বড় বেশি সরল, আবেগে টলােমলাে-কখনাে যেন সে দন্তন্য রূহমান, কখনাে বা রাশীক । তাই তাে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সে গড়ে তােলে ‘Childream Society',' তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টায় তাদের সাথেই মিশে যায় সে প্রতিনিয়ত। শুধু স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নয়, অন্যের মধ্যে স্বপ্নের শিখা জ্বালিয়ে দেয়ার অবিশ্বাস্য এক ক্ষমতা আছে সুমন্তর। তাই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি একদল কিশাের-কিশােরী ঘিরে থাকে তাকে । অনুপ্রেরণা মেনে তার মতােই হতে চায় তারা। নিজের টুকরাে টুকরাে স্বপ্ন-সাধ তাদের মধ্যে বুনে দিয়ে ঘুরে ফেরে সুমন্ত, ফেরে নিজের ছােট্ট জগন্টাতে । তাকে দেখে আনন্দে গা ঘেঁষে আদর জানায় পােষা সাদা বেড়ালটা, মাছগুলাে খলবল করে ওঠে অ্যাকুরিয়ামে, এমনকি তার অপেক্ষায় থাকা লেখালেখির টেবিলটাও যেন হেসে ওঠে। একবার-সুমন্তের হাতে নতুন কোনাে চরিত্রের, নতুন কোনাে গল্পের জাল বােনা দেখবে বলে!