দুনিয়া পাল্টানোর রাজনীতি হিসেবে মার্কসের কাছে যা ছিল অনুশীলনের দর্শন, গ্রামসির চিন্তায় তা কাউন্টার হেজিমনি বা পাল্টা আধিপত্য। এই আধিপত্য কেবল অর্থনৈতিক বা সামরিক আধিপত্য নয়, বরং তা একই সাথে সাংস্কৃতিক এবং ভাবাদর্শগত আধিপত্য। আধিপত্য নির্মাণ ব্যতিরেকে রাজনৈতিক রূপান্তর সংগঠিত হতে পারে না।
আধিপত্য বিস্তার করেই শাসক যেহেতু শাসক হিসেবে বহাল থাকে, নিম্নবর্গের মুক্তির জন্য গ্রামসি তাই পাল্টা আধিপত্যের ধারণা প্রদান করেন। প্রকৃতপক্ষে, গ্রামসির সামগ্রিক চিন্তার গতিমুখ ছিল রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে। রাষ্ট্র কীভাবে কাজ করে, এই বইয়ে গ্রামসি তা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন। সমাজের কোন কোন স্তর বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী হয় তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কসীয় চিন্তার তাত্ত্বিক হিসেবে তিনি জানতেন, সর্বহারার শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। জিতে নেওয়ার জন্য আছে পুরো দুনিয়া।
শৃঙ্খলের গঠন প্রণালী জানলে শৃঙ্খল ভাঙ্গা সহজ হয়। কাজেই, আধিপত্য কীভাবে রূপায়িত হয় তার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে গ্রামসি পাল্টা আধিপত্যের ধারণা প্রদান করেছিলেন। ফ্যাসিবাদের কারাগারে বসে গ্রামসি এই নোটগুলো লিখেছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা এমন এক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে শাসকগোষ্ঠী জনগণের মাঝে এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে, রাজনৈতিক রূপান্তরের আর কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষের বাস্তব দুনিয়া সর্বদা পরিবর্তনশীল, ফলে তার নতুন সংজ্ঞায়ন দরকার। এই বই সেই প্রচেষ্টার একটি অংশ।