দশটি অধ্যায় নিয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা’ বইটি লেখা। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন’ বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যার চূড়ান্ত পরিণতি ‘স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র’ ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ হিসেবে অভিহীত। তাই, ভাষা-আন্দোলনের মতো বিষয়ে ভবিষ্যতেও সে আরও অনেক বই-প্রবন্ধ লেখা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আলোচ্য বইটির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি বিভিন্ন লেখক ও বিশিষ্টজনের লেখা বা বক্তব্যের উদ্ধৃতি-নির্ভর। শিক্ষক, শিক্ষর্থী, গবেষক, সাধারণ পাঠক, এককথায় সবার কাছে বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে আমার বিশ্বাস। বাংলা, বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতি, বাঙালির জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বা স্বাধীনতা অর্জনে ভাষা-আন্দোলনের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক কিছুজানা সম্ভব হবে এই বই থেকে। বইটিতে লেখকের মূলকথা হচ্ছে- ‘আমাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা বা জাতি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উপাদানটি হলো রাষ্ট্র ভাষা-আন্দোলন। বাংলাদেশ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্মের সাথে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ওতপ্রতোভাবে জড়িত... এই আন্দোলন সর্বপ্রথম শুরু ১৯৪৭ সালে...’ দ্রষ্টব্য, প্রথম অধ্যায় : আরম্ভের আগেও আরম্ভ আছে। বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস ও প্রক্রিয়াকে পাকিস্তানি কালপর্বে সীমাবদ্ধ করে দেখলে, লেখকের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতেই হয়। অনেক পরিশ্রম করে লেখক এম আর মাহবুব পাঠকবর্গের হাতে তার নতুন এ বইটি তুলে দেওয়ায় তাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমি বইটির প্রচার-সাফল্য কামনা করি।
এম আর মাহবুব
এম আর মাহবুব ১৫ অক্টোবর ১৯৬৯)এর পিতৃভূমি নরসিংদী জেলার মনােহরদী উপজেলার চর। আহম্মদপুরে। ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর। কর্মজীবনের শুরুটা, সাংবাদিকতার মাধ্যমে। কিছুদিন অধ্যাপনার কাজে নিয়ােজিত ছিলেন। সাহিত্য-সংস্কৃতির আত্মগত প্রাণ। পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন নিয়ে শেকড়সন্ধানী গবেষণায় তন্নিষ্ঠ। ইতােমধ্যে ভাষাসৈনিকদের জীবনী ও ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস বিষয়ক ১৬ টি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। একই বিষয় নিয়ে প্রকাশাপেক্ষায় আছে আরও বেশ কিছু গ্রন্থ। গ্রন্থসমুদয় ভাষা-আন্দোলনের নানা অজানা তথ্য মেলে ধরেছে: ফুটে উঠেছে অনেক অশ্রুত দিক || ভাষা-আন্দোলন নিয়ে বৃহৎ ক্যানভাসে রচিত গ্রন্থে অসম্পর্শিত কথা তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং করছেন অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে সংগ্রহ করেছেন ভাষা আন্দোলনের অনেক দুর্লভ দলিল, অপ্রকাশিত ছবি ও স্মৃতি স্মারক উদ্ধার করেছেন শত ভাষাসংগ্রামীদের গৌরবদীপ্ত অবদানের স্মৃতিকথা । ভাষা-আন্দোলন স্মৃতি সংরক্ষণ আন্দোলনেও তিনি একজন একনিষ্ঠ কর্মী। শুরুটা ১৯৮৭ সাল থেকে। সেই থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত দুই যুগ ধরে তিনি নিজেকে নিয়ােজিত রেখেছেন এই মহান কর্মযজ্ঞে। আজও পড়ছেন, লিখছেন, শিখছেন। এ কাজের স্বীকতিস্বরূপ ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় । কর্মসূত্রে ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক। বাংলা একাডেমীর সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।