ভূমিকা রান্না একটি শিল্প, যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে পরিবার, সমাজ ও সভ্যতা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই শিল্পটির যথাযথ পরিচর্যাই পারে সৃষ্টির সেরা মানবজাতিকে সব রকমের স্বাস্থ্যহীনতা ও অস্বাস্থ্যজনিত অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে। শুধু বেঁচে থাকা নয়, সুস্বাস্থ্যের সুরক্ষাও খাদ্য গ্রহণের মূল লক্ষ্য। শুধু স্বাদ বা আনন্দ গ্রহণ নয়, পুষ্টিসাধন এবং বর্ধন ও খাদ্য প্রস্তুতি রান্নার অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই বাঁচার মতো বাঁচতে হলে, সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে হবে প্রতিদিনই। প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন, রন্ধন, সংকলন ও সংরক্ষণে থাকতে হবে দক্ষ ও জ্ঞানসমৃদ্ধ চিন্তা-চেতনা।
‘রান্না ও পুষ্টিজ্ঞান’ গ্রন্থটিতে মজাদার, স্বাস্থ্যসম্মত ও যুগোপযোগী রান্নার সঙ্গে মেশানো হয়েছে সেরা চিকিৎসক ও সুদক্ষ পুষ্টিবিদদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে গুণগত মানের খাদ্য নির্বাচন। যাতে মজাদার খাবার আনন্দঘন মন দিয়ে গ্রহণ করার সাথে সাথেই শরীরের সামগ্রিক পুষ্টি ও প্রয়োজনের পাওনা মিটে যায়। সংকলনটিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি সব রকমের মজাদার বিভিন্ন স্বাদের রান্না, যার পরিমিত চর্চা রন্ধনশৈলীকে করবে প্রশংসিত, স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ বেঁচে থাকাকে করবে উদ্ভাসিত। রান্না ও পুষ্টি সংকলিত অন্যান্য বইয়ের সাথে এ সংকলনটির মূল পার্থক্য হলো, এটির পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত। রান্নার কৌশল ও রেসিপির মাঝেও রয়েছে নতুনত্ব, যা এর আগে এত সুচারুরূপে অন্য কোনো গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি। রন্ধনশিল্পীদের সব শিল্প-পিপাসা মেটাবে এ গ্রন্থ। এমনকি যাঁরা পেশাদার রন্ধনশিল্পী তাঁদের ক্ষেত্রেও। গৃহিণীরাও সংকলনটি তাঁদের সংগ্রহে রাখতে পারেন। আপনার সব রকমের পারিবারিক প্রয়োজনে উপকারী বন্ধুর মতো পাশে থাকবে এ সংকলন। কী নেই এতে? রয়েছে খাদ্য ও খাদ্যের উপাদান, পুষ্টিগত মান, রান্নার সরঞ্জামের পরিচয় ও ব্যবহারবিধি, শিশুর পুষ্টি ও টিফিন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও হৃদরোগীর খাবারের পুষ্টিনির্দেশ, ফলের পুষ্টি ও রেসিপি এবং অসংখ্য জানা ও অজানা জ্ঞানসমৃদ্ধ তথ্য ও রান্নার সুসমন্বিত সব রকমের পদ্ধতি।
‘রান্না ও পুষ্টিজ্ঞান’ সংকলনটি সাথে রাখুন, সময়-সুযোগে পড়ুন-নিজেকে করে তুলুন সুদক্ষ রান্না ও পুষ্টিবিজ্ঞানের জ্ঞানী-গুণী এবং চৌকস ব্যক্তিত্ব হিসেবে। এতে করে পরিবার ও সমাজে আপনিও রাখতে পারবেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। উপসংহারে বলতে চাই, খাদ্যকে ক্ষুধা মেটানোর উপাদান বা শুধুই খাদ্যসামগ্রী না ভেবে এর ব্যাপক মূল্যায়ন করতে ও বুঝতে চাই বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও জ্ঞান অর্জন। খাদ্য, রান্না ও পুষ্টি একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আধুনিক সভ্যতা রান্নাকে পর্যাপ্ত মর্যাদা দিয়ে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছে। রন্ধনশিল্পীকে সুদক্ষ শিল্পীর আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তবে এটাই সব নয়, এই অগ্রযাত্রার মশাল অনির্বাণ রাখতে চাই চিকিৎসা ও পুষ্টিবিজ্ঞানের সম্মিলিত ও সুদীপ্ত একাত্মতা। খাদ্য, রান্না ও পুষ্টি শুধু বেঁচে থাকার প্রাথমিক অবলম্বন না হয়ে এর সুবিন্যস্ত ছোঁয়া রাখুক মানবসভ্যতার সব স্বাস্থ্যময় অঙ্গীকারে-কায়মনে এমন আশাই ব্যক্ত করছি।
পরিশেষে ‘রান্না ও পুষ্টিজ্ঞান’ সংকলনটিকে সমৃদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য এ গ্রন্থের সহযোগী লেখক ভাসানটেক সরকারি মহাবিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া শারমিন খানকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই আলেয়া বুক ডিপোর স্বত্বাধিকারী তরুণ প্রকাশক কাওছার আহমেদকে, যার একান্ত সহযোগিতায় গ্রন্থটি প্রকাশের মুখে দেখল। আশা করছি রন্ধনপ্রেমীদের কাছে গ্রন্থটি সাদরে গৃহীত হবে। আর তাতেই নিহিত আমাদের সবার শ্রমের সার্থকতা। আল্লাহ হাফেজ। -লে. কর্নেল ডা. নাজমা বেগম নাজু
তানিয়া শারমিন খান
লে. কর্নেল ডা. নাজমা বেগম নাজু
পেশায় মিলিটারি চিকিৎসক তিনি। জাতিসংঘ ইতিহাসের প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট (লেভেল-টু হাসপাতাল) কমান্ডার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স কমান্ডার এবং প্রথম নারী অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় একজন সফল কথাসাহিত্যিক তিনি। সাহিত্যের সবগুলাে শাখায় অসংখ্য প্রকাশ রয়েছে তার। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি, কিশাের উপন্যাস, শিশুতােষ গ্রন্থ, স্বাস্থ্যবিষয়ক বই, রান্না ও পুষ্টির বই সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি পেয়েছেন একাধিক সম্মাননা ও পুরস্কার। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক, জাতীয় মানবাধিকার পদক, লেখক সাংবাদিক ঐক্য ফাউন্ডেশন পদক, স্বাধীনতা পদক, জগজিৎ সিং পদক, বেগম সুফিয়া কামাল পদক, নীলফামারী বার্তা পদক, সেনা পারদর্শিতা পদক, রংপুর মেডিকেল কলেজ দিবস পদক, তার মাঝে উল্লেখযােগ্য। জাতিসংঘের ইতিহাসে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখায় তিনি অর্জন করেছেন ফোর্স কমান্ডারস কমেন্ডেশন, ২ অ্যাওয়ার্ড ফর ডিঠিংগুইশড সার্ভিসেস এবং নমিনেশন ফর মিলিটারি জেতার অ্যাডভােকেট অ্যাওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার ২০১৬। বর্তমানে তিনি ২য় বারের মতো কন্টিনজেন্ট। কমান্ডার হিসাবে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখ্য সেখানে কালি সিনিয়রের পদ অলংকৃত করছেন, তিনি একজন মেডিকেল কমান্ডারের জন্য যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।