হুমায়ুন আজাদ, শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে বহমান এক জনগােষ্ঠীর ভেতরে থেকেও কাটিয়েছেন জোতির্ময় জীবন। দেখেছেন রুগ্ন ব্রাজনীতির রােষানলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বাঙালির শরীর ও মন। তার ভাষা ও প্রতিষ্ঠান, তার সমাজ ও রাষ্ট্র। তার সামাজিক, রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও শৈল্পিক জীবনে। অন্ধকারের মত ধেয়ে আসছে ভয়াবহ স্থবিরতা। এই পারিপার্শ্বিক জীবনের গভীর হতাশা থেকে প্রশ্ন। তুলেছেন, “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম?” যেখানে বাকস্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানবাধিকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। হুমায়ুন আজাদ ব্যক্তিস্বাধীনতার উদ্ধত অহমিকায় দুবৃত্তায়িত ক্ষমতাকে কেন্দ্রের উন্মুক্ত তরবারির নিচে মাথা রেখে বিক্ষোভ তুলেছেন বর্ণমালায়। তাঁর রাজনৈতিক প্রবন্ধাবলীতে তাঁর চারপাশের দুঃশাসন, দারিদ্র, দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, ধর্মীয় উন্মাদনা, ক্ষমতা ও অর্থ গৃপ্লদের উন্মত্ততা এবং শিল্প-সাহিত্যের বিকলগ্রস্থতার কথা বর্ণনা করেছেন বিক্ষুব্ধ ভাষায়। অবসান চেয়েছেন, এই সব মানবাধিকারহীন নিপীড়ন ও বর্বরতা ও বর্বরতার নিরঙ্কুশ উল্লাসে ভরা অন্ধকারময়তার।
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি পার্টি থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।