‘রাফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম’ নামের শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় ‘তিরস্কার থেকে প্রখ্যাত ইমামগণকে মুক্তকরণ’। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রচিত 'রাফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম' সংক্ষিপ্ত কলেবরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বই। বর্তমান যুগে এদেশে বইটির প্রয়োজনীয়তা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। ইমাম আজম আবু হানিফা, ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র.) প্রমুখকে কেউ কেউ ঢালাওভাবে সমালোচনা করছেন। কখনও ছোটোখাটো কিছু মতপার্থক্য আবার কখনও একটি হাদিসের উপর অন্য হাদিসকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তাঁদেরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কেউ কেউ আরেকটু এগিয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.)সহ অন্য ইমামগণের মাজহাব অনুসরণকে, তাঁদের হাদিস শাস্ত্রের জ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় ব্যস্ত। শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (র.) এ ধরনের হীন মানসিকতার বিরুদ্ধে বহু আগেই কলম ধরেছিলেন। এ বইটি তারই সাক্ষ্য বহন করছে। তিনি বিভিন্নভাবে প্রমাণ করেছেন যে, মুজতাহিদ ইমামগণের মতভেদ যৌক্তিক ও সঠিক এবং তাঁদেরকে দোষারোপ করা নির্বুদ্ধিতা।বইটিতে শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া মাজহাবের ইমামগণের কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ইমামগণ যে হাদিস অনুসরণ করেননি, তিনি তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে স্বীকৃত ইমামগণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
প্রফেসর ড. আবুল বয়ান মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান
শায়খুল ইসলাম তাকিউদ্দিন ইবন তাইমিয়া
ইবন তাইমিয়া ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিশিষ্ট হাম্বলী ফকিহ, মুহাদ্দিস, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। তাঁর পুরো নাম তকিউদ্দিন আবুল আব্বাস আহমদ ইবন আব্দুল হালিম ইবন মাজদুদ্দিন আব্দুস সালাম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবুল কাসিম আল খিদর ইবন মুহাম্মদ ইবন আল খিদর ইবন আলি ইবন আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়া আন নুমায়রী আল হাররানি আদ দিমাশকি।তিনি দামেস্কের নিকটবর্তী হাররান শহরে সোমবার ১০ রবিউল আউয়াল ৬৬১ হি:/ ২৩ জানুয়ারি, ১২৬৩ খ্রি. ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা মাজদুদ্দীন আব্দুস সালাম ও বাবা শিহাবুদ্দীন আব্দুল হালিম উভয়েই হাম্বলী মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ একজন বিশিষ্ট বুযুর্গ ও যাহিদ ছিলেন। ইবন খাল্লিকানের মতে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আবদাল ও যাহিদদের অন্যতম। ইমাম যাহাবির মতে, তিনি পরিণত বয়সে আসার আগেই ফাতওয়া দান, ধর্মীয় বিতর্ক ইত্যাদিতে অসাধারণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইবন কাসিরের মতে তিনি সতেরো বছর বয়সে গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন।