ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ নিসর্গপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ বাংলার নদী, সবুজ-শ্যামল-নির্জন প্রকৃতির কাছে জেনেছেন পৃথিবী কত সুন্দর। শিলাইদহে ভরা নদীর ধারে বর্ষার জলে শরতের সোনালি আভা দেখে তাঁর মনে হয়েছে, নব যৌবনা ধরণীসুন্দরীর সঙ্গে কোনো এক জ্যোতির্ময় দেবতার ভালোবাসা চলছে। শরতের সুন্দর সকাল রোমান্টিক কবির চোখে সুধাবর্ষণ করেছে। আবার সন্ধ্যা পেরোলেই আধখানা চাঁদের সাথে ফুলের মতো ফুটে থাকা দূরের তারাদের সুবাস নিয়ে কবি একাকী নীরবে নদীর চরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চারদিকের নিজঝুম রোদে তাঁর মনটা উড়ু উড়ু করেছে। আকাশ তাঁর মাথার ওপরে সান্তু্বনার বৃষ্টি বর্ষণ করেছে। বাতাস, আলোক প্রতিক্ষণ তাঁর মন ছেয়ে যেন নতুন পাতা গজিয়ে উঠেছে। তিনি নতুন প্রাণ ও বলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। কখনোবা অনেকদিন রোগভোগের পর প্রকৃতি থেকে অল্প অল্প বাতাস নিয়ে তাঁর দেহ ও মন স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। জীবনের অপূর্ণতা তিনি প্রকৃতির মাঝ থেকে পূরণ করতে চেয়েছেন। এখানকার জনজীবন-বিশেষ করে নদীতে ছেলেদের মাছ ধরা আর স্নানরত মেয়েদের আনন্দোচ্ছাস তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে গল্প-কবিতা রচনায়। গরীব প্রজাদের দুর্গতি তাঁকে স্বদেশ ও সমাজ ম্পর্কে ভাবনায় ফেলেছে। স্বচক্ষে দেখা এদেশের তুলনাহীন প্রকৃতি তাঁকে বারবার প্রেরণা দিয়েছে সংগীত রচনায়। বাংলাদেশই তাঁর চিন্তার নতুন দিগন্তকে প্রসারিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের কাছে যে অনেক ঋণী-একথা ছড়িয়ে আছে তাঁর ছিন্নপত্র সহ নানা লেখায়। লেখক জহিরুল হক রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন এ বইয়ে। বইটি পড়ে পাঠকেরা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক অজানা কথা জানতে পারবেন।