ফ্ল্যাপে লিখা কথা কালবদলের এ-ক্রান্তিকালে আমাদের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক জমিনে দাঁড়িয়ে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সময় এসেছে। বাইরে থেকে আসা পরিবর্তনের ঝাপটা আমরা চাইলে বন্ধ হবে না। বাইরের শক্তিকে শুধু দোষারোপ না করে নয়া এ-সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের সামাজিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু বস্তুগত দারিদ্র্য নয় আমাদের মানসিক দারিদ্র্যও তীব্র। পরের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে এ-দৈন্য দূর করা যাবে না। সে কারণেই আমাদের আত্মশক্তির ওপর ভরসা না করে উপায় নেই। আমরা একই সঙ্গে বাঙালি এবং বিশ্বনাগরিক। নিজস্ব সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মাথাউঁচু করে আমরা প্রগতির পথে হাঁটতে চাই। ঘরে-বাইরে আমাদের এ আত্মমর্যাদাশীল তৎপরতার মাধ্যমেই কেবল বাংলাদেশকে উন্নত করতে পারব। অন্ধকার থেকে আলোর পথের এ-অভিযাত্রায় রবীন্দ্রনাথকে আমাদের নিত্যসঙ্গী হিসেবে পেতে পারি। শিল্প-সাহিত্যের নানা প্রাঙ্গণে বিচরণ করেও রবীন্দ্রনাথ বঞ্চিত মানুষের মুক্তির কথা সর্বক্ষণ ভেবেছেন। তাদের দারিদ্র্যের বহুমাত্রিকতা নানা লেখায় ও ভাষণে ফুটিয়ে তুলেছেন। পাশাপাশি সমবায় কৃষিউন্নয়ন, স্থানীয় সমাজ উদযোগ, প্রযুক্তি, শিক্ষা, পরিবেশ, নারীর উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির নানা উপায় নিয়ে ভেবেছেন।
শুধু ভেবেছেন বললে ভুল হবে, সুযোগ পেলেই এসব ভাবনার বাস্তব রূপায়ণেরও চেষ্টা করেছেন। নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথকে পর্যন্ত কৃষি উন্নয়ন বিষয়ে বাইরে থেকে প্রশিক্ষিত করে এনেছেন।
তাই আমাদের দেশের উন্নয়ন যদি আমাদের মতো করে করতে চাই তাহলে রবীন্দ্রনাথের আর্থ-সামাজিক ভাবনা থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করতে পারি। আর সে-প্রচেষ্টাই করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান এ-বইতে।
সূচিপত্র * রবীন্দ্রভাবনার আলোকে উন্নয়ন ও সংস্কৃতি * কালবদলের এই দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা * রবীন্দ্রনাথের আত্মনির্ভরতা ভাবনা এবং আমাদের দারিদ্র্য নিরসনের লড়াই * রবীন্দ্রভাবনায় দারিদ্র্য নিরসন
আতিউর রহমান
অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন আর্থ-সামাজিক পটভূমি মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ অসহযোগের দিনগুলি রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা উন্নয়ন আলাপ জনগণের বাজেট আলো আঁধারের বাংলাদেশ সুশাসনের সন্ধানে অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন উন্নয়ন কার জন্য অপউন্নয়ন স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা Peasants and classes Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।