প্রসঙ্গ কথা اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعلَمِيْن وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلى سَيِّد الْمُر سَلِيْنَ خَاتَم النَّبيِين مَحَمد وَاله وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ. আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা কোথায়? কিভাবে তাঁর শোকর আদায় করবো? তিনি আমাকে তাঁর মহাগ্রন্থের প্রাথমিক শিক্ষার্থী, কুরআনের জ্ঞান অন্বেষণে অনুসন্ধিৎসু পাঠক ও মর্ম উদ্ধারে সচেষ্ট অনুসন্ধানী নবাগতদের সামনে একটি প্রাথমিক চিত্র তুলে ধরার সৌভাগ্য দান করেছেন, যার সংকলন ও পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়েছিলো প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল পূর্বে। এই দীন লেখকের চিন্তার ফসল, কলম ও অধ্যবসায়ের নির্যাস কোন রচনা আজ অবধি এতোটা বিলম্বে প্রকাশিত হয়নি, যেমনটি ঘটেছে এই কুরআনী খেদমতের বেলায়। এরও একটা কাহিনী আছে। এই কাহিনী শোনানো যেমন মজার বিষয়, শোনাও তেমনি লাভশূন্য নয়। খৃষ্টাব্দ ১৯৩৪ সালে এই অধম দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় তাফসীর ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করে এবং এ বিষয় দু’টি পড়ানোর দায়িত্বও যথারীতি আমাকে সোপর্দ করা হয়। দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় তখন তাফসীর শাস্ত্রের প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলী (জালালাইন, বায়যাবী ও কাশ্শাফ) পড়ানো হতো। অবশ্য শুরু থেকেই এ বিষয়ের প্রতিও গভীরভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছিলো, যাতে ছাত্রদের বয়স ও যোগ্যতা হিসেবে ক্লাসভিত্তিক পূর্ণ কুরআনে কারীমের মূল অনুবাদ পড়ানো হয়। পূর্ণ কুরআনে কারীম পাঠদানের বিষয়টি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একই পাঠ্যসূচির অধীনে বিভিন্ন শ্রেণীর কুরআনে কারীমের সবক পড়ানোর দায়িত্ব আমাকেও দেয়া হয়। দরজায়ে শশম তথা মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রদের পাঠ্য তালিকায় ছিলো কুরআনে কারীমের প্রথম দশ পারা। অন্যান্য ক্লাসে যথারীতি অন্যান্য পারা পাঠ্যভুক্ত ছিলো। বরকতপূর্ণ এই খেদমত ও ব্যস্ততার সময় আমার মনে হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সামনে কুরআনে কারীমের পরিচয়, তার মূল লক্ষ্য, কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়সমূহ তুলে ধরা, কুরআনে কারীম দ্বারা যথাযথরূপে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি, সেই লক্ষ্যে তাদেরকে প্রস্তুত করা এবং এ সম্পর্কিত তাদের ভুল ধারণা, দুর্বলতা ও ব্যাধিসমূহ সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করে তোলা খুবই জরুরী। যেসব কারণে মানুষ কুরআনে কারীমের বরকত ও প্রভাব থেকে বঞ্চিত থাকে, কুরআনের মর্ম ও আবেদনের পথে যেসব বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং এসব ব্যাধি ও অন্তরায় স্বয়ং কুরআনে কারীম বলে দিয়েছে- কুরআন পাঠ ও অধ্যবসায়ের ক্ষেত্রে এগুলো মূলনীতির মর্যাদা রাখে। কুরআনে কারীম থেকে যারা উপকৃত হতে চায়, এসব বিষয় ও মূলনীতি তাদের জন্য পথ-নির্দেশক ও বন্ধু হতে পারে। এসব মূলনীতির সহায়তায় কুরআনে কারীমের অসীম জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণের এই সফর অনেকটা সহজ ও নিরাপদ হতে পারে। শুধু আমাদের দীনি মাদরাসাগুলোর ইতিহাসেই নয়, স্বয়ং দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার ক্ষেত্রেও এ ছিলো এক নতুন অভিজ্ঞতা ও সাহসী পদক্ষেপ। একজন তরুণ শিক্ষক- যার বয়স সবেমাত্র বিশ অতিক্রম করেছে- এই সাহস এবং স্বীয় সম্মানিত বড় ভাই মৌলবী ডাক্তার হাকীম সায়্যিদ আবদুল আলী, নাযিম, নদওয়াতুল উলামা ও স্বীয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাওলানা হায়দার হাসান খান, মুহতামিম, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা’র অনুমতিতে এই কাজ শুরু করে। ধারাবাহিক এই নতুন পদক্ষেপটি মাধ্যমিক স্তরের (দরজায়ে শশম) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ‘মাযামীনে কুরআন’ তথা ‘আল-কুরআনের আলোচ্য বিষয়’ শিরোনামে সম্ভবত ১৯৩৬ বা ১৯৩৭ সালে শুরু করেছিলাম। অতঃপর কয়েক বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। শিক্ষার্থীগণ বিষয়টি আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে ক্লাসে নিয়মিত নোট করতে থাকে এবং এ বিষয়ে রীতিমতো পরীক্ষাও হতে থাকে। ধীরে ধীরে এর আলোচনার পরিধি বিস্তৃত হতে থাকে। বিষয়ে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হতে থাকে। ১৯৪০ সালে যখন তৃতীয়বারের মতো ‘আন-নদওয়াহ’ প্রকাশিত হতে শুরু করে, তখন এর কয়েকটি নির্বাচিত অংশ তাতে প্রকাশিত হয়। বিদায়ী ছাত্ররা বছর শেষে সযতেœ এর নোটগুলো সঙ্গে করে নিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে লেখক ছাত্রদের কাছ থেকে ওইসব নোট সংগ্রহ করে এবং ‘আন-নদওয়া’র প্রকাশিত নিবন্ধগুলোর সহায়তায় একটি নতুন পাণ্ডুলিপি তৈরি করিয়ে নেয়। কিন্তু কিছুদিন পর জানা গেলো, সংকলিত সেই পাণ্ডুলিপিটি ‘গুম’ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা হয়ে থাকে। পাস করে যাওয়ার পর সাধারণত তারা আর মাদরাসার সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ ধরে রাখে না। তাই নতুন করে ওসব কপি সংগ্রহ করা, অতঃপর সংকলন ও কপি করা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কঠোর শ্রমলব্ধ এই সম্পদ হারানোকে শীতল ধৈর্যের সাথে মেনে নিতে হলো। ভাবলাম, এর মধ্যেও হয়তো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোন হেকমত নিহিত আছে। তাই দ্বিতীয়বার কাজটি করার মতো সাহস আর হয়ে উঠলো না। তাছাড়া অন্যান্য ইলমী ও দাওয়াতী ব্যস্ততার ভিড়ে এর সুযোগও ছিলো না। দারুল উলুমের অনেক ফাযিল- যারা আমার ওসব ক্লাসে উপস্থিত ছিলো- বারবার তাগাদা দিয়েছে। এর উপকারিতার কথা ভেবে নতুন করে গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য আবদার করেছে। কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম, সেকালের এক স্নেহাস্পদের কাছে সেই পাণ্ডুলিপিটির একটি ফ্রেশ কপি সংরক্ষিত আছে। এতে করে এক হারানো অমূল্য রতœ ফিরে পেলাম। পাণ্ডুলিপিটি নতুন করে পড়ে দেখলাম। বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোথাও কোথাও সংযোজন ও সম্পাদনার প্রয়োজন অনুভব হলো। কিন্তু সাহস সঞ্চয় করতে পারলাম না। আর সেই অবসরই বা কোথায়? তাই একান্ত প্রয়োজনীয় সংযোজন ও কোথাও কোথাও কিছুটা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ নতুনরূপে ঢেলে সাজালাম। অবশ্য ‘বিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে কুরআন মাজীদ ও প্রাচীন আসমানী গ্রন্থসমূহ’- প্রবন্ধটি স্বয়ং লেখকের ‘মানসাবে নবুওয়ত’ গ্রন্থের ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ অধ্যায় থেকে চয়ন করে এ গ্রন্থের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি। আরও সমীচীন মনে হয়েছে, অতীতকালের বুযুর্গানে দীনের তেলাওয়াত পদ্ধতি, কুরআনে কারীমের প্রতি তাঁদের আদব ও শ্রদ্ধা এবং কুরআন পাঠের বিস্ময়কর প্রভাবদীপ্ত ঘটনাবলীও উপস্থাপিত হওয়া দরকার। কারণ, এসব ঘটনার মধ্যে জাদুময় প্রভাব ও দিক-নির্দেশনা থাকে, যা কোন গবেষণামূলক তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে থাকে না। তাছাড়া ‘আরকানে আরবা’আহ’ ও ‘মানসাবে নবুওয়ত’ ইত্যাদি গ্রন্থে যেসব বিষয় বিস্তারিত লেখার সুযোগ লাভ করেছি, তা এই গ্রন্থ থেকে বাদ দিয়েছি। কারণ, এসব বিষয় উল্লিখিত গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ আলোচিত হয়েছে। মাকতাবায়ে ইসলাম লক্ষ্ণৌ’র পরিচালক স্নেহাস্পদ মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ হামযা হাসানী নদভীর অবিরাম তাগাদা ও আগ্রহে দীর্ঘ অপেক্ষার পর আমার এই পাণ্ডুলিপি এখন ‘মুতালা’আয়ে কুরআন কে উসূল ওয়া মাবাদী’ নামে গ্রন্থাকারে নিবেদিত হচ্ছে কুরআন মাজীদের ভক্ত পাঠক ও গবেষকদের খেদমতে। আশা করি, কুরআনে কারীমের অধ্যয়ন, গবেষণা ও কুরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই উপকারী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। কুরআনে কারীম অধ্যয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগী ও উপকারী অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব হবে। কুরআনের মর্ম ও আহ্বানের পথে অন্তরায় বিষয়াবলী সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনাসহ এমন অনেক ভ্রান্তি ও সংশয় সম্পর্কেও সতর্ক করে দেবে এই গ্রন্থ, পাঠক সহজেই যেসব ভ্রান্তি ও সংশয়ের শিকার হয়ে থাকেন। সেই সাথে কুরআনে কারীমের অলৌকিকতার এমন অনেক দিকও উন্মোচিত হয়ে উঠবে, যা হয়তো বা এ পর্যন্ত এতোটা স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণসহ উর্দু কোন গ্রন্থে আলোচিত হয়নি। সূচিপত্র কুরআনের পরিচয় কুরআনের ভাষায় ১. কুরআনের জ্ঞান অকাট্য, সংশয়হীন ২. কুরআনের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট ও বিশদ ৩. কুরআন : সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী ৪. কুরআন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহকে সত্যায়ন করে এবং তত্ত্বাবধানও করে ৫. কুরআন নিরাপদ পথ দেখায় আঁধার থেকে টেনে আনে আলোর দিকে ৬. কুরআন : একটি স্বচ্ছ দর্পণ ৭. কুরআনের একটি মুজেযা : বিভিন্ন জাতি ও ব্যক্তির স্থায়ী ও স্বাভাবিক আমল ও সমস্যাগুলোর বর্ণনা কুরআনের অলৌকিকতা কুরআন : অলৌকিকতার কয়েকটি দিক আল-কুরআনের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ মু’জেযা পবিত্র ইসলাম কুরআনের দ্বিতীয় মু’জেযা অসামান্য তত্ত্ব ও তথ্য প্রাচীনকালের ধর্মগ্রন্থগুলোতে মানবিক জ্ঞানের মিশ্রণ আধুনিক বিজ্ঞান ও গবেষণার সত্যায়ন অদৃশ্য ঘটনাবলীর বিশ্বস্ত বর্ণনা কুরআনুল কারীমের তৃতীয় বিশিষ্ট মু’জেযা কুরআন মাজীদ ও অন্যান্য আসমানী গ্রন্থের মধ্যে পার্থক্য হযরত ইউসুফ (আ.) : বাইবেল ও কুরআনে কুরআন ও তাওরাতের বর্ণনায় আম্বিয়ায়ে কেরামের সীরাত প্রাচীনকালের ধর্মগ্রন্থগুলোর বিকৃতি সম্পর্কে সতর্কবাণী এবং অতীতকালের ধর্মগুলোর আকীদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রোমকদের জয় : কুরআনে কারীমের একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ইরানী হামলার কারণসমূহ ইরানের বিস্তীর্ণ বিজয় হেরাক্লিয়াসের সিংহাসন দখল রোমকদের সমস্যাবলী হেরাক্লিয়াসের কর্মকৌশল কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী ভবিষ্যদ্বাণীর প্রকাশ হেরাক্লিয়াসের মধ্যে আকস্মিক পরিবর্তন হেরাক্লিয়াস : সিপাহসালার, বিজেতা পূর্ণতা পেলো ভবিষ্যদ্বাণী আবার নির্জীব হেরাক্লিয়াস আল কুরআনের আরো কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী হেদায়াত ও ইনকিলাব : কুরআনের অনন্য ভূমিকা ইতিহাস ও গবেষণার আলোকে কুরআন মাজীদ ও অতীতকালের আসমানী গ্রন্থসমূহ কুরআনে কারীম দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্তাবলী ও প্রতিবন্ধক বিষয়সমূহ কুরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার পথে অন্তরায়সমূহ ১. অহংকার ২. ঝগড়া ও বিতর্ক ৩. পরকালের অস্বীকৃতি ও দুনিয়ার দাসত্ব কুরআনে কারীম বুঝতে সহায়ক গুণাবলী ১. অনুরাগ ২. মনোযোগসহ শ্রবণ ও অনুসরণ ৩. ভয় ৪. অদৃশ্যে বিশ্বাস ৫. চিন্তা-ভাবনা ৬. মুজাহাদা ৭. আদব ও আযমত কুরআনের তেলাওয়াত ও ভাবনা সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা একটি অভিজ্ঞতা : একটি পরামর্শ
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ, ইলমে ওহীর বাতিঘর। যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক। বিশ্বময় হেদায়াতের রােশনি বিকিরণকারী। উম্মতের রাহবার ও মুরব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর।
জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানেই নিবেদিত ছিল। । আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে; সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ রচনার মাধ্যমে। গ্রন্থটি গােটা ভারতবর্ষে তাঁকে পরিচিত করে তােলে। এরপর তিনি রচনা করেন মা যা খাসিরাল আলাম বিনহিতাতিল মুসলিমীন নামক কালজয়ী গ্রন্থ। যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্তীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শত শত সংস্করণ বেরিয়েছে।
বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তাঁর কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ । উর্দ থেকে তার আরবী রচনাই যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনই তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, লখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নাদওয়াতুল-উলামা-এর রেকটর এবং ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পার্সোন্যাল ল বাের্ডের সভাপতি ছিলেন।
ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসীন তিলাওয়াতরত অবস্থায় ইনতিকাল করেন। সাত খণ্ডে রচিত তারিখে দাওয়াত ও আযীমত তার। আরেকটি কালজয়ী রচনা যার অনবদ্য অনুবাদ সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস। বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে বইটির সার্থক অনুবাদ তুলে। দিতে পেরে আমরা আল্লাহর শােকরিয়া আদায় করছি।