‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পূরাণ’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ বাংলাসাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রে জীবনবোধের উন্মেষ এবং বিভূতিভূষণের প্রকৃতিনির্ভর রচনাসমূহে জীবনের যে উপলব্ধির বিকাশ; আহমদ ছফার এ লেখাটি একই গোত্রভুক্ত হয়েও স্বাতন্ত্রের দাবি করতে পারে। মানবজীবনের সঙ্গে বিহঙ্গাজীবন ও উদ্ভিদজীবনের যে একটি অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক, আহমদ ছফা এ রচনাটিতে সে সম্পর্কসমূহের নানান মাত্রা নির্দেশ করতে চেষ্টা করেছেন। ক্ষুদ্র তৃণাঙ্কুর থেকে স্পন্দিত নক্ষত্র পর্যন্ত যে চরাচরপ্লাবিত জীবনপ্রবাহ, মনুষ্যজীবনে তার একাংশ মাত্র উপলব্ধ এবং তরঙ্গিত হয়। মানুষ একা নয়, বিচ্ছিন্ন নয়। সবকিছু যেমন চলছে-সেও চলছে। সবকিছু যেমন দাঁড়িয়ে আছে-সেও দাঁড়িয়ে আছে। এ রচনাটি মানবজীবনের সঙ্গে অন্যবিধ জীবনপ্রবাহের যেমন সেতুবন্ধ তেমনি বাংলাসাহিত্যের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের একটি সেতুবন্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা করা যায়।
আহমদ ছফা
আহমদ ছফার জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ থানাধীন গাছবাড়িয়া গ্রামে, এক কৃষিজীবী পরিবারে। বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, যদিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কিছুদিন পদ্ধতিগত গবেষনা করেন। কিন্তু অচিরেই তা ছেড়ে দিয়ে মৌলিক রচনা ও চিন্তাচর্চায় আত্মনিবেশ করেন। মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকতা, পত্রিকা প্রকাশ, প্রেস ব্যবসা বা এনজিও কার্যক্রমকে পেশা হিসেবে নিলেও, আজীবন লেখালেখিই ছিল তার মূল কাজ। ছাত্রাবস্থায়ই লিখেছিলেন সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস, যদিও তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই একটি উপন্যাস সূর্য তুমি সাথী। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ-কর্ম, শিশু-কিশাের সাহিত্য ইত্যাদি মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিরিশের অধিক। তাঁর পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ উপন্যাসটি জাপানি ভাষায় ও ‘বস্তি উজার কবিতাটি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ ছাড়া ওঙ্কার সহ বেশ কিছু লেখা ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ওঙ্কার উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি বেশ কিছু গানও লিখেছেন। গ্যোতের ফাউস্ট কাব্যনাট্যের বঙ্গানুবাদ তাঁর এক অমর কীর্তি। প্রতিষ্ঠানবিরােধী ও প্রতিবাদী বক্তব্যের জন্য আজীবন তিনি ছিলেন আলােচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে। পাশাপাশি নতুন প্রতিভা আবিষ্কার ও তার লালন এবং নবীনদের মধ্যে চিন্তা উসকে দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর জুড়ি ছিল না। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, যদিও এই সংগঠনের দেওয়া পুরস্কারও তিনি গ্রহণ করেন নি। সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য শিল্পী সুলতান পাঠশালা প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম কীর্তি। মৃত্যু : ২০০১ সালের ২৮ শে জুলাই, ঢাকায়।