শেলী নাজের কবিতা শুরু থেকেই ভাব ও স্বরের স্বাতন্ত্র্যে স্পন্দমান। তিনি শোনাতে চেয়েছেন নারীতন্ত্রের নিজস্ব কণ্ঠস্বর। সে কণ্ঠস্বর স্বাধীন, সার্বভৌম, স্বশাসিত নারীরই, যা পুরুষ-নির্দেশিত নয়। কিন্তু যে সামষ্টিক নারীর কথা তাঁর কবিতায় অর্থ ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে, তাতে তিনি রেখে চলেন ব্যক্তি-নারীর নিজস্ব পরিচয়চিহ্ন। ফলে ব্যক্তিতা ও সমগ্রতা একাকার হয়ে যায়। তাঁর কবিতা মানে ব্যক্তি-নারীর অনুভূতি ও চৈতন্য পেরিয়ে সার্বিকের বিপুল পৃথিবীতে আত্ম-অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা। এ পৃথিবী অবধারিতভাবে পুরুষেরই। এর সৃষ্টিশীল প্রতিপক্ষ শেলী নাজের কবিতা। প্রেমে, ঘৃণায়। পুরুষসমাজ নারীর যে ভাবমূর্তি গড়ে দিয়েছে, নির্ধারণ করে দিয়েছে নারীর যে মৌল ভূমিকা, তার প্রবল বিরোধিতায় ক্ষুরধার হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতা। শেলী নাজের সাতটি কবিতাগ্রন্থ থেকে বাছাই করে প্রণীত হলো পুরুষসমগ্র। পুরুষকে দেখার, অনুভবের ও চেনার এক মহৎ নারীবাদী শিল্পকলা। এ প্রয়াস বাংলা সাহিত্যে এর আগে দেখা যায়নি।
শেলী নাজ
জন্ম ১১ মার্চ, হবিগঞ্জে। বাবা মো. রহমত উল্লাহ, মা রহিমা খাতুন। শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের উজ্জ্বল দিনগুলো কেটেছে সমুদ্রবিধৌত চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। চাকরিজীবন শুরু জীবাণুবিদ হিসেবে, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। শৈশব থেকেই লেখালেখি শুরু, মূলত কবিতা দিয়েই। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদীতে। নক্ষত্রখচিত ডানায় উড্ডীন হারেমের বাঁদী প্রথম কাব্য। বিষাদ ফুঁড়ে জন্মেছি বিদ্যুৎলতা, শেকলে সমুদ্র বাজে, চর্যার অবাধ্য হরিণী, মমি ও মাধুরী, সব চাবি মিথ্যে বলে এবং সুচের ওপর হাঁটি নামে তাঁর আরও ছয়টি কাব্য এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গোড়া থেকেই হাঁটতে চেয়েছেন প্রথাবিরোধী ছকে। প্রতিনিয়ত খুঁজেছেন নিজের শেকড়। তাঁর কবিতায় রয়েছে আত্মনির্ণয়ের যন্ত্রণা, বিপন্নতা, সমাজবাস্তবতায় দ্বান্দ্বিক বোধ। আর লিখতে চেয়েছেন নারীর নিজের জগৎ, নিজস্ব বোধ, সমস্যা ও উপলব্ধির কথা।