পূর্ব বাঙলার উপন্যাস, পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাঙলায় রচিত নির্বাচিত ১৮ জন ঔপন্যাসিকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পাকিস্তান আমলের এক পর্যায়ে, ঐতিহাসিক পূর্ব বাঙলাকে পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরের চেষ্টা হয়েছিল। সেই চেষ্টা নেতিবাচক উপাদান হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। পূর্ব বাঙলার উপন্যাসকে আমরা বলতে পারি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে অতি-সূক্ষ্ম সামাজিক ইতিহাসের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১। ইতিহাসের এই পর্যায়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ভাষাবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদেরা নানা দিক থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। সেই সব বিশ্লেষণ রাষ্ট্র, সমাজ ও বিশ্ব রূপান্তরের দলিল; অবশ্য মোটা দাগের দলিল। আর পূর্ববঙ্গের উপন্যাস হলো তারই কথাশৈল্পিক বিশ্লেষণ। সাহিত্যিক বিবেচনায় এই সময়ে উপন্যাসের মধ্যে নানাবিধ গঠনগত, বিন্যাসগত ও শিল্পগত সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু সামাজিক উপাখ্যান হিসেবে কথাশিল্পীদের উপাখ্যানগুলো সামাজিক ইতিহাসের মূল্যবান দলিল। পূর্ব বাঙলার উপন্যাস পাঠ-উপকরণ হিসেবে অসমাপ্ত। আমরা জানি অসমাপ্তিই হচ্ছে ঐতিহাসিক বিবর্তনের অপরিহার্য শর্ত। পূর্ব বাঙলার উপন্যাসের খতিয়ান এ ভূখণ্ডের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রথাগত আলোচনার আঙ্গিক গৃহীত হলেও এই গ্রন্থে একটি যুগের ক্রান্তির নানাদিগন্ত উদ্ভাসিত হয়েছে। আবুল ফজল থেকে শুরু করে রাজিয়া খানের প্রাথমিক উপন্যাসগুলো আলোচনায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। মাঝখানে আছে, সত্যেন সেন, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আবু রুশদ, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, রশীদ করিম, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল গাফফার চৌধুরী। অনেকের নাম আছ, কথা আছে পূর্ব বাঙলার উপন্যাসে। প্রথম না হলেও প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ। এই সময়ের উপন্যাসের গঠনগত ও শিল্পগত বিষয়গুলো সাহিত্যিক বিবেচনায় আনা হলেও সে সবের প্রধান গুরুত্ব সামাজিক ইতিহাসের মূল্যবান দলিল হিসেবে। পূর্ব বাঙলার উপন্যাস একটি মৌলিক রচনা এবং বইটি নানা বিষয়ে বিশেষতঃ পূর্বপাকিস্তানের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক বলয়ে গবেষণার জন্য অপরিহার্য।
মনসুর মুসা
এই বইয়ের রচয়িতা মনসুর মুসা ভাষাতত্ত্ব অধ্যয়ন করেছেন যুক্তরাজ্যে আর যুক্তরাষ্ট্রে, সিঙ্গাপুরে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ; অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগে ; তারপর আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে। আধুনিক ভাষা ইনষ্টিটিউট-এর পরিচালক ছিলেন তিনি। দু বার তিনি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ছিলেন। তাঁর আগ্রহ আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ; সমাজভাষাবিজ্ঞানে, মনোভাষাবিজ্ঞানে এবং ভাষা-পরিকল্পনায়। মানুষের ভাষা-সমস্যা সম্পর্কে তিনি বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। তুর্কীভাষা আন্দোলন, শ্রীলঙ্কার ভাষা-সমস্যা, আসামের ভাষাদাঙ্গা, বাঙলা ভাষা ও রাজনীতি, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের ভাষাতাত্ত্বিক মূল্যায়ন ইত্যাদি গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশে বিদেশে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।