ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ, উর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ-‘পরে; আনিলে বেদনা নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে।সেদিন অম্বর-মাঝে শ্যামে নীলে মিশ্রমন্ত্রে স্বর্গলোকে জ্যোতিষ্কসমাজে মর্তের মাহত্ন্যগান করিলে ঘোষণা। যে জীবন মরণতোরণদ্বার বারম্বার করি উত্তরণ যাত্রা করে যুগে যুগে অনন্তকালের তীর্থপথে নব নব পাস্থশালে উড়াইলে নিঃশঙ্ক গৌরবে অজ্ঞাতের সম্মুখে দাঁড়ায়ে। তোমার নিঃশব্দ রবে প্রথম ভেঙেছে স্বপ্ন ধরিত্রীর, চমকি উল্লাসি নিজেরে পড়েছে তার মনে-দেবকন্যা দুঃসাহসী কবে যাত্রা করেছিল জ্যোতিঃস্বর্গ ছাড়ি দীনবেশে পাংশুম্লান গৈরিকবসন-পরা, খণ্ড কালে দেশে অমরার আনন্দেরে খণ্ড খণ্ড ভোগ করিবারে, দুঃখের সংঘাতে তারে বিদীর্ণ করিয়া বারে বারে নিবিড় করিয়া পেতে। মৃত্তিকার হে বীর সন্তান, সংগ্রাম ঘোষিলে তুমি মৃত্তিকারে দিতে মুক্তিদান মরুর দারুণ দুর্গ হতে’ যুদ্ধ চলে ফিরে ফিরে; সন্তরি সমুদ্র-উর্মি দুর্গম দ্বীপের শূন্য তীরে শ্যামলের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিলে অদম্য নিষ্ঠায়, দুন্তর শৈলের বক্ষে প্রস্তরের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বিজয়-আখ্যানলিপি লিখি দিলে পলব-অক্ষরে ধুলিরে করিয়া মুগ্ধ, চিহ্নহীন প্রান্তরে প্রান্তরে ব্যাপিলে আপন পন্থ....... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দ্বিজেন শর্মা
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ২৯ মে, ১৯২৯ বৃহত্তর সিলেট জেলার বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে। পিতা চন্দ্রকান্ত শর্মা, মা মগ্নময়ী দেবী। স্নাতকোত্তর পাঠ (উদ্ভিদবিদ্যা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু।। বরিশাল ব্রজমােহন কলেজ (১৯৫৮-৬২), ঢাকা নটর ডেম কলেজ (১৯৬২-৭৪), অতঃপর মস্কোর প্রগতি প্রকাশন সংস্থায় অনুবাদক (১৯৭৪-৯১)। কর্মসূত্রে অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ এবং নিজের লেখা চব্বিশ তন্মধ্যে অধিকাংশ বই প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক । এগুলাের মধ্যে উল্লেখ্য : শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০), ফুলগুলি যেন কথা (১৯৮৮), মম দুঃখের সাধন (১৯৯৪), গাছের কথা ফুলের কথা (১৯৯৯), নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক। ভাবনা (২০০০), গহন কোন বনের ধারে (১৯৯৪), হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ড্যালটন হুকার (২০০৪), বাংলার বৃক্ষ (২০০১), সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসতত্ত্ব (১৯৮০), জীবনের শেষ নেই (২০০০), বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ (২০০৩), সতীর্থবলয়ে ডারউইন (১৯৯৯), ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি (১৯৯৭), কুরচি তােমার লাগি (২০০৭) এবং সােভিয়েত ইউনিয়নে দীর্ঘ বসবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯)। বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানান সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তিনি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, প্রকৃতি সুরক্ষা এবং নগর ও উদ্যান সৌন্দর্যায়নের এই নিরলস কর্মী আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গণের এক বর্ণাঢ্য মানুষ।