বাঙালির জীবনে প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার নিতান্তই স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের গ্রামগঞ্জ ও লৌকিক জীবনের বিশিষ্ট অনুষঙ্গ এই বিশিষ্টার্থক ধারা। নানাভাবে সৃষ্ট অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন-বাগধারার উৎস সন্ধান করার কষ্টকর গবেষণা ভীষণ দুরূহ ব্যাপার। তা সত্ত্বেও কৃতী গবেষক সমর পাল এ কাজে হাত দিয়ে কিছু উৎসের সন্ধান দিয়েছেন প্রবাদের উৎসসন্ধান গ্রন্থে।
গতানুগতিকতার বৃত্তমুক্ত গবেষণাকর্মে ব্রতী সমর পাল এ গ্রন্থের নানা নিবন্ধে ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, পুরাণ, ধর্মশাস্ত্র, ভাষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ভূগোল, সাহিত্য, কিংবদন্তি-সবকিছুর সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়ে আশ্চর্যজনক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার লেখার মূলে যে আগ্রহ তা হলো প্রগতিশীল সমাজশক্তির উদ্বোধন ঘটানো।
সরকারি চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব সমর পাল ২৪ বছর মাঠ প্রশাসনে থেকে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তার ছায়াও আমরা এ গ্রন্থে লক্ষ করি। তিনি লেখেন অগ্রগামী সমাজ-ব্যবস্থা বিনির্মাণের আশায় নব-প্রজন্মের অন্তরে মা-মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা জাগাতে।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সমর পালের জন্ম নাটোর শহরের পালপাড়ায়। বাবা প্রয়াত শিক্ষক প্রতাপচন্দ্র পাল ও মা সিদ্ধেশ^রী পাল। স্ত্রী দেবী পাল ও দুই পুত্রসন্তান অর্ণব ও দীপ্রকে নিয়ে তার সাদামাটা সংসার। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন দেশ ও বিদেশে। বিনীত, সরল, নিতৃতচারী এই মানুষ বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির জীবন-সদস্য। ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, জাপান, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্যের অঞ্চল।
সমর পালের অসংখ্য লেখার মতো প্রবাদের উৎসসন্ধান গ্রন্থটি ছাত্রছাত্রী, লোক-গবেষক, সাহিত্য-রসিক তথা সর্বস্তরের মানুষকে অনাবিল আনন্দ, জ্ঞান ও বিচিত্রমুখী তথ্যের সন্ধান দিবে বলে আমাদের বিশ্বাস।