পাপড়ি রহমান এক স্বতন্ত্র গল্পকার। কমবেশি কুড়ি-বাইশ বছর আগে তাঁর একটিমাত্র গল্প পড়ে এক গল্পবাজ-পাঠক এভাবেই তাঁকে চিনেছিলেন। আজ তিনি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারেন যে, অখÐ বাংলা কথাসাহিত্যে পাপড়ি রহমান কেবল স্বতন্ত্রই নন, এক গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক।
তিনি স্বতন্ত্র কোথায়? নিবিষ্ট পাঠে পাঠক নিশ্চয়ই তা অনুধাবন করবেন---পাপড়ি যখন গল্প লেখেন, তখন তিনি তাঁর নারীসত্তাকে যেন নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন। যার ফলে গল্পের বুননে পুরুষের প্রতি যেমন বিদ্বেষ ফুটে ওঠে না, তেমনই নারীর প্রতি পক্ষপাতের দেখাও মেলে না। পাপড়ির গল্পের চরিত্র-প্রতিবেশ তার ধর্ম-অর্থসহ আমাদের চেনা— চরিত্ররা মূলত গ্রামবাংলার---গ্রাম থেকে শহরেও ঢুকে পড়ে, শহুরে চরিত্রের স্মৃতিতে রয়ে যায় গ্রাম্য দৃশ্যাবলি। ফলে গল্প বলার ভঙ্গিতে বর্ণনার বাহুলা থাকলেও তা কখনই ছোট গল্পের কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে যায় না, বরং সেসব পায় কাব্যিক-ব্যঞ্জনা।
কেন পাপড়ি গুরুত্বপূর্ণ? তাঁর গল্পের নিবিড়-পাঠ পাঠককে 'সাহিত্য'-এর ব্যুৎপত্তিগত তাৎপর্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে। কেবল তা-ই নয়, উনিশ-বিশ শতকে যে অর্থ-তাৎপর্যে ছোটগল্পের স্রষ্টারা 'বুদ্ধিজীবী' আখ্যা পেয়েছিলেন, পাপড়ি রহমান তারই ঐতিহ্য বহন করছেন। সময়োচিত নতুন মাত্রাও সংযোজন করেছেন তাঁর গল্পে। রূঢ়-রুক্ষ বাস্তবের ফাটলপথে লেখক সত্তার 'এমপ্যাথি' ছড়িয়ে পড়েছে গল্পের চরিত্রগুলিতে। সমাজের হিতার্থেই তিনি গল্প বলেন। আবহমান বাংলা ছোটগল্পের ধারায় পাপড়ি রহমান প্রান্তিক মানুষের পক্ষে এক ব্যতিক্রমী গল্পকার, কেননা তিনি গল্পের মাঝে বুনে দেন চিরায়ত স্বপ্ন।