ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ বাঙালির প্রতিদিনের প্রাতঃস্মরণীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবর্ষে কবিকে স্মরণ করা সারা বিশ্বের বাঙালির জন্য অপরিহার্য। তাঁর অমর সৃষ্টি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।....“ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও তাঁরই রচিত। তিনি শুধু বাংলাভাষীদের কবি নন, তাঁর কবিতা চির ভাস্কর হয়ে আছে আর্য-অনার্য, কালো-তামাটে, গীতাভ-মঙ্গোলীয় নানা বর্ণের নানা ভাষার নানা জাতির সাহিত্য-শিল্পনুরাগী মানুষের হৃদয়ে। সার্ধশত জন্মবর্ষে এসে একথা বলা যায় যে, নানা ভাষায় তাঁর কবিতা-গান, গল্প-উপন্যাস, নাটক-নৃত্যনাট্য অনুদিত হয়েছে। আর একথা সত্যি যে বয়সের শেষ সময়ে রবীন্দ্রনাথ যখন বুঝলেন যে, বাংলা ভাষা যাঁরা পড়তে পারেননা, তাঁরা তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির রস আস্বাদন পুরোপুরি হয়তো করতে পারবেন না। আর যখনই তিনি ছবি এঁকে বিশ্ববাসীকে প্রমাণ করলেন তার সকল সৃষ্টি কতটা অনবদ্য ও আধুনিক। তিনি তাই নিজেই ‘প্রভাত উৎসব’ কবিতায় লিখেছেন “হৃদয় আজ মোর কেমনে গেল খুলি/ধরায় আছে যত মানুষ শত শত/আসিছে প্রাণে মোর, হাসিছে গলাগলি.....।” একাধারে কবি ও গীতিকার, সুরকার, ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাটক ও নৃত্যনাট্য রচয়িতা, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক এবং চিত্রশিল্পী। তা সত্ত্বেও তিনি কবি এবং একমাত্র কবিত্তাই তাঁকে বিশ্ব মানবের রূপকার করেছে। আর এসবকিছুই আধুনিকতার স্পর্শে উজ্জ্বল কষ্টিপাথর হয়ে আছে আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়। যার আলোয় প্রতিদিন আমরা, আমাদের নতুন ও পরবর্তী প্রজন্ম আলোকিত হচ্ছে এবং হবে ক্রমাগত.....। ভবিষ্যত দ্রষ্টা কবি তাই বলেছিলেন, “আজি হতে শতবর্ষ পরে/কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহল ভরে.....।” অনেক আগেই শতবর্ষ গত হয়ে সার্ধশতবর্ষে এসেও তিনি আরও অমিতাভ উজ্জ্বল জ্যোতির্ময়। তাঁর কবিতা ও গান প্রতিদিন পঠিত ও গীত হয়, তাঁর নাটক ও নৃত্যনাট্য প্রতিদিন অভিনীত হয় এবং চিত্রকর্ম নবরূপে প্রদর্শিত হয়, তাঁর উপন্যাস ও ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় প্রায়শ; নতুন প্রজন্ম ভিন্নতর মাত্রায় পুনঃ পুনঃ নির্মাণ করছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটক, প্রেমিক-প্রেমিকারা মধুর আলাপে তাঁর কাব্যভাষ্য উদ্ধুত করে কথা বলে। এবং অনাগত হাজার বছর তার সৃষ্টিতে অমর হয়ে থাকবেন স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ। সার্ধশত জন্মবর্ষে তাই তাঁর অনুরাগী প্রয়াত ও জীবিত বাংলাভাষী কবিদের পক্ষ থেকে তাঁকে নিয়ে রচিত ও নিবেদিত পঙ্ক্তিমালার অর্ঘ্য ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ কাব্যগ্রন্থখানি তাঁরই চরণে উৎসর্গিত হলো।
ড. মুস্তাফা মজিদ
Title :
প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ : সার্ধশত জন্মবর্ষে পঙ্ক্তিমালা