রবীন্দ্রনাথ ও তলেস্তয়। আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ তো, অন্তত আমাদের, প্রতিমুহূর্তের নিশ্বাস। চলমান সর্বক্ষণ। তাই তাদের লেখা পড়ি। বড়ো কথা পড়তে ভালোবাসি। তারাও আমাদের মতোই মানুষ, বিচ্ছিন্ন কোনও সত্তা নয়। মহাজাগতিক। কিন্তু আজকাল আমাদের আশেপাশে, কাউকে কাউকে অপ্রয়োজনে অকারণে, অযৌক্তিকভাবে, একটি বিশেষ আভায় মন্ত্রিত করার অপপ্রয়াস চলছে। ‘অপপ্রয়াস’ এই জন্য যে, শিল্প-সাহিত্যের জগতে, কোনওকিছু চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জোর করার তো নয়ই। ...
ভালোবাসা নির্বোধ। সে পাত্র বা পাত্রী চেনে না। কিন্তু লোভ বা লালসা তো তেমন নয়। তারা অত্যন্ত সুচতুর। স্ব স্ব লক্ষ্যভেদের প্রণালিটিকে ভালোই বোঝে, যথাযথ অনুমান করে নিতে সক্ষম। প্রয়োজনে প্রস্তুত রাখে, অত্যন্ত সজাগ, প্রতিটি ছলাকলা আক্রমণের যন্ত্রপাতি, তীক্ষè নখ, সাঁড়াশি। কামনার বস্তু তো তখন তার আরাধনার পাত্র নয়, নয় মিত্র, নিতান্ত শত্রুপক্ষ। বশ করো, বশ করতে না-পারলে, ধ্বংস করো। কিন্তু ভালোবাসা সৃষ্টি করতেই শুধু জানে, কদাচ ভুলক্রমেও, ধ্বংস করতে নয়। তখন আত্মপীড়নও এক ধরনের আত্মসম্ভোগে পরিণত হয়। ভালোবাসা, ভালোবাসা। বঁধু-মিলনের ক্ষণ ঘটতে পারে যে কোনও মুহূর্তেই, সম্পূর্ণ শূন্যতায়। শূন্যতায় সংগীত, না শূন্যতার সংগীত। সংগীতের শূন্যতা। অপূর্ব, অদ্ভুত। এইমাত্র অনুদারের পাপড়ি মেলল একটি ফুল, আচমকা। চক্ষুর ভিতরে ও বাইরে। ভালোবাসা, ভালোবাসা। একমাত্র তুমিই সম্বল। পাত্র নয়, পাত্রী নয়। একমাত্র তুমি। বোধ! বিস্ময়। অনুরণন! ঘোর! দিব্যদৃষ্টি! আলোক সম্পাত! একমাত্র আলোক! আলোকেরই ঝরনাধারা! ভালোবাসা! তোমাকে তো হারিয়ে ফেলিনি কালে-কালান্তরে, তাই তো খুঁজে পাইনি। পাইনি, পাব কী করে যা হারাইনি! বহুদিন, কেউই, এদিকে আসেনি। খুব যে একটা অসুবিধা পাছে, তা নয়, তারপরও, মানুষের মুখ, মানুষীর আমি, দাঁত, শুভ্র-আসা। অভ্যর্থনা, অভিবাদন, আবির্ভাব, প্রত্যাখ্যান, একসূত্রেই গাঁথা। তবু, তবু, তবু, তবু! আমি চাই না তোমাকে। চাই, চাই! একটি মন্দির বা মসজিদ, ক্যথিড্রাল কোনও ধর্মের নয়, কোনও গোত্রপতির নয়, শুধু ধ্যানের, আরাধনায়। সেই অর্থমুক্তি, মূর্তি, মূর্তিমান প্রাণপ্রতিমা, প্রতিষ্ঠা গেয়ে যাক, আমার রক্তে-মাংস-হাড়ে, অক্ষম রচনায়, অবিন্যস্ত থেকো, পঙক্তিতে-পঙক্তিতে। শুধু আশা, শুধু ভালোবাসা। ধন্য হোক, ধন্য হোক মানবতীর্থে, তাই আলোকের।