কৈশোরের কল্পনাপ্রবনতা, গ্রামীণ নারীজীবন, আবহমান গ্রাম বাংলা, আর সবকিছু ছাপিয়ে প্রকৃতি ও মানুষ মিলিয়েই পথের পাঁচালী।
বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) এর প্রথম উপন্যাস পথের পাঁচালী আপাতদৃষ্টিতে বিশেষ কোনো চমতকারিত্ব নয়, ইন্দির ঠাকুরণ নামের এক নারীর কৌলিন্য প্রথা শিকার হবার করণ গল্প, দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠা, দিনভর পথে পথে ঘুরে তাদের প্রকৃতির বিস্ময়ের মাঝে ডুবে যাওয়া, সবশেষে এক করুণ বিচ্ছেদ নিয়েই এই উপন্যাস। তবুও কোন জাদুবলে এই উপন্যাস হয়ে উঠল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস? সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসটি অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা আজও পৃথিবী-বিখ্যাত।
পথের পাঁচালী প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে, কলকাতার একটি পত্রিকায় ধারাবাহিক হিসেবে। বই হিসেবে প্রকাশিত হয় এর পরের বছর। উপন্যাসের এক অংশে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় অপু আর দুর্গার সারাদিন পথে পথে ঘোরা নিয়ে লেখেন, ‘তুমি চলিয়া যাইতেছ, ... পথের ধারে তোমার চোখে কি পড়িতে পারে, তোমার ডাগর নবীন চোখ বিশ্বগ্রাসী ক্ষুদায় চারদিককে গিলিতে গিলিতে চলিয়াছে - নিজের আনন্দের এ হিসাবে তুমিও একজন দেশ আবিষ্কারক।’
আমরা সবাই আসলে আবিষ্কারক। জনমভর এক ক্ষুদা নিয়ে আমরাও পথ চলি। অপু আর দুর্গার ডাগর নবীন চোখে হয়তো আমরা নিজেদেরও ছায়া দেখি। এই উপন্যাসের আকাশসমান জনপ্রিয়তার রহস্য হয়তো এটিই।