সমুদ্রের বালুকাবেলায় যেমন অসংখ্য নুড়িপাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে, তেমনি হারিয়ে যাওয়া সময় এবং সেই সময়ের নানা রঙের মানুষের, ঘটনা-দুর্ঘটনার, ভালো-মন্দের ছবিও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে সমকালীন সংবাদপত্রে, আত্মজীবনীতে, দলিলপত্রে, এমনকি আপাত অনুল্লেখ্য চিঠিপত্রেও। ভবিষ্যতের অনুসন্ধানী গবেষক ওসব থেকেই পাকা জহুরীর মতো খুঁজে নেন ইতিহাসের হিরন্ময় উপাদান। ব্যক্তির আত্মজীবনী সমকালীন ইতিহাসের একটি বড় উপাদান। কারণ, এতে ব্যক্তি নিজেকে, নিজের চারপাশকে চিত্রিত করেন। আর আত্মজীবনী-রচয়িতা যদি হন অধ্যাপক আনিসুর রহমান, যিনি খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ হয়েও অর্থনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহত্তর জীবনের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে পথ চলেছেন, তাহলে সে আত্মজীবনী একই সঙ্গে হয়ে ওঠে সাহিত্যের স্বাদ ও ইতিহাসের উপাদানে ভরপুর এক অনন্য রচনা। যার ২য় পর্ব এটা। খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোঃ আনিসুর রহমান ঢাকা ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকা ও ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে কাজ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অনুপ্রেরণায় দেশের নানা স্থানে যেসব স্বতঃস্ফূর্ত গঠনমূলক উদ্যোগ শুরু হয় তাদের সঙ্গে জড়িত হন। গতানুগতিক অর্থশাস্ত্র ছেড়ে তিনি এ সময় থেকে জনগণকে যোগযুক্ত করে আত্মনির্ভর উন্নয়নের পথ সন্ধানে ব্রতী হন। ১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে দেশের এ ধরনের উদ্যোগের অধিকাংশই বিপর্যস্ত হয়।