সামগ্রিক বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরজীবীবিদ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে পরজীবী ও এদের সংক্রমণের ধারা জানা থাকা জরুরি। পরজীবীর আভিধানিক অর্থ যে অন্যকে আশ্রয় করে বাঁচে বা অন্যের দ্বারা প্রতিপালিত হয়। এখানে ‘পরজীবী প্রাণী’ বলতে বোঝায় পোষক প্রাণী, বিশেষ করে মানুষের দেহে ভর করে বাঁচে এমন জীবন। অর্থাৎ মানবদেহে ছোট বড় পরজীবী প্রাণী যখন বসবাস করে তখনই নানাবিধ সংক্রমণ ঘটে রোগ-বালাইয়ের। এই সংক্রামক ব্যাধিগুলোর বেশির ভাগ যে অণুবীক্ষণীয় পরজীবী প্রাণী দ্বারা সংঘটিত হয়, তা ১৮৬৩ সালের আগে তেমন জানা ছিল না। অথচ ঐতিহাসিক আমলে কোনো কোনো পরজীবী প্রাণীর সংক্রমণে ভারত কেন, ইউরোপেও লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে কলেরা, বসন্ত, প্লেগ, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বরের কথা জানা যায়। এইসব রোগ-বালাইয়ের কারণস্বরূপ যেসব সংক্রামক পোষক প্রাণী তাদের বিস্তারিত পরিচয় রেজাউর রহমান তাঁর গবেষণালব্ধ পরজীবী প্রাণীতে বর্ণনা করেছেন একজন কীটতত্ত্ববিদ হিসেবেই। পরজীবী প্রাণী শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং এটি একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান সহায়ক গ্রন্থও-যা উচ্চতর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ বিজ্ঞান-পাঠকের উপযোগী।
রেজাউর রহমান
রেজাউর রহমান, জন্ম ১৯৪৪ সালে, ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে এমএসসি করেছেন ১৯৬৫ সালে। রাজশাহী সরকারি ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে পেশাজীবনের শুরু। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে বিজ্ঞান গবেষক হিসেবে ১৯৬৬-২০০২ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। চেক বিজ্ঞান একাডেমি, প্রাগ থেকে ১৯৭৯ সালে কীটতত্ত্বে পিএইচ ডি লাভ করেন। খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ে (১৯৯১-২০০৫)। একশরও বেশি মৌলিক ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান প্রবন্ধ লিখেছেন। বংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর কীটতত্ত্ব বিষয়ক স্নাতকোত্তর মানের পাঠ্যপুস্তকগুলো যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান গ্রন্থও। প্রথাগত নিয়মে অবসরপ্রাপ্ত হলেও শিক্ষকতা-গবেষণা ও বিজ্ঞান আন্দোলন এবং সম্প্রচার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তিনি নিয়মিতভাবে সাহিত্যচর্চায়ও নিবেদিত। সাহিত্যচর্চা করেন স্কুলজীবন থেকে। প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৬৩ সালে। প্রকাশিত গল্পের সংখ্যা শতাধিক। কয়েকটি উপন্যাসও লিখেছেন।