যে কয়েকজন চীনা পরিব্রাজক উপমহাদেশে এসেছিলেন হিউয়েন সাঙ তাঁদের একজন। বিশ্বখ্যাত এই চীনা পরিব্রাজক ভারতে এসেছিলেন মূলত তীর্থ বাসনা থেকে। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান এবং যেসব স্থানে ধর্মপ্রচার ও যেসব জনপদ পরিভ্রমণ করেন, সে সব দেখার ইচ্ছা শৈশব থেকে লালন করে হিউয়েন সাঙ। জ্যোতি বিকাশ বড়–য়া বাংলাদেশের একজন প্রতিভাবান প্রকৌশলী। তিন স্ব-উদ্যোগে বাঙালি পাঠকদের কাছে হিউয়েন সাঙের সেই ভ্রমণ-বৃত্তান্ত উপস্থাপন করার ব্রত নিয়ে পরিব্রাজ হিউয়েন সাঙে ভারত ভ্রমণ শীর্ষক এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়, পূর্ণাঙ্গ অনুবাদও নয়, হিউয়েন সাঙের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যই এখানে সঞ্চিত হয়েছে। চীনা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত রচনার সারসংকলন করে তিনি বাংলা ভাসার পাঠকদের কাছে হিউয়েন সাঙের জীবনের বিচিত্র কথা তুলে ধরেছেন। জ্যোতি বিকাশ বড়–য়া ভাষার প্রাঞ্জল ও তথ্যনিষ্ঠ। এশিয়ার বৌদ্ধ সভ্যতার ধূসর অধ্যায়কে তিনি লোকসমক্ষে হাজির করে একটি মহৎ কর্ম সম্পাদন করেছেন।
জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া
জ্যোতি বিকাশ বড়ুয়া ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার তালসরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাস্টার সুরেন্দ্র লাল বড়–য়া ছিলেন বিশিষ্ট সমাজহিতৈষী ও শিক্ষাবিদ, ব্রিটিশ আমলে পরৈকোড়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম জেলা জুরি বোর্ডের সাবেক সদস্য, ‘সপ্তগ্রাম প্রজ্ঞাতিষ্য স্মৃতি সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা এবং নিত্যপাঠ্য ধর্মপদ নামে বিখ্যাত গ্রন্থের প্রণেতা। জ্যোতি বিকাশ বড়ূয়া ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন। ১৯৬৬ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ-দপ্তর-এ যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৫-৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সক্রিয় সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে উত্তর বঙ্গের আদিবাসীদের সংগঠিত করে, আবার তাদের বিস্মৃত ধর্মে অর্থাৎ বৌদ্ধধর্মে ফিরিয়ে আনেন এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে তাদের জন্য কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার মিঠাপুকুর বেণুবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন (এই বিহারকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামে আরও ২০টি বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে)। তিনি আমেরিকা, কানাডা এবং ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ-স্থাপনা ও প্রাচীন কীর্তিসমূহ বিশদভাবে দেখেছেন। তাঁর এই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া তিনি অবসর জীবনে নিজেকে বৌদ্ধ কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর গবেষণা, বৌদ্ধচর্চা ও ধর্মভাবনা এবং বৌদ্ধ সাহিত্য ও ভ্রমণ কাহিনী রচনায় নিয়োজিত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তাঁর রচিত বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর আরও কিছু রচনা প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।